শিক্ষা বোর্ডে নিরীক্ষায় ঘুষ
প্রধান কার্যালয়ে ‘রিজার্ভে’ নিরীক্ষা বিভাগের পাঁচ কর্মকর্তা, তদন্ত কমিটি গঠন
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে নিরীক্ষাকাজে এসে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠার পর অডিট দলের পাঁচ কর্মকর্তাকে প্রধান কার্যালয়ে ‘রিজার্ভে’ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত বছরের ১৫ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধিদল ৫টি শিক্ষা বোর্ডে নিরীক্ষা কার্যক্রম চালায়। এর মধ্যে ১৪ থেকে ২৮ নভেম্বর নিরীক্ষা হয় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে। এই বোর্ডে নিরীক্ষা চলাকালে বোর্ডের নানা অনিয়ম ঢাকতে অডিট দলকে সাড়ে ২১ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই সূত্র ধরে খোঁজ নিতে গিয়ে ময়মনসিংহ ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডেও ১৮ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণসহ মোট ৩৯ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া যায় ওই অডিট দলের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ৯ জানুয়ারি প্রথম আলোর ৩–এর পাতায় ‘৩৯ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ’ ও প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘৩ শিক্ষা বোর্ডে ৩৯ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ, জমা হয় স্বজনের হিসাবে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর ৯ জানুয়ারি অডিট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (প্রশাসন) শাহজাহান সিরাজ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে অডিট দলের পাঁচ কর্মকর্তাকে প্রধান কার্যালয়ে বদলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, জনস্বার্থে ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে সামাজিক নিরাপত্তা অডিট অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ আলমগীর, শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিকুল ইসলাম, একই অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সৌরভ হাসান, এসএএস সুপারিনটেনডেন্ট (শিক্ষানবিশ) কাজী মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দীন এবং অডিটর তানজির আলমকে এসিএজি (রিজার্ভ) অফিসে বদলি/পদস্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই দিন পূর্বাহ্ণে বদলিকৃত কার্যালয়ে যোগদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষরকারী অডিট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (প্রশাসন) শাহজাহান সিরাজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁদের প্রধান কার্যালয়ে রিজার্ভে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা সাধারণত ওএসডি বলি না; রিজার্ভ বলি। বিষয়টি তদন্ত করতে নিরীক্ষা বিভাগের পরিচালক সাইফুর রহমান জামালী ও পরিচালক (এমআইএস) জানেছার আজাদকে নিয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শাহজাহান সিরাজ আরও বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে অভিযোগ উঠেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলবেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিষয়েও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের প্রতিবেদনটি পড়েছিলাম কয়েক দিন আগে। অডিটরদের ওএসডি–ও করা হয়েছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট যে তিনটি বোর্ড ঘুষ দিয়েছে, তাদের বিষয়গুলোরও অধিকতর তদন্ত হওয়া উচিত এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমাদের লড়াই তো এই প্রচলিত অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধেই ছিল। সে অনিয়মগুলো যদি থেকেই যায়, তাহলে পরিবর্তনটা হলো কই?’