সিলেটে বন্যার পানি কোথাও বেড়েছে, কোথাও কমেছে
সিলেট নগর ও জেলায় বন্যার পানি কোথাও বেড়েছে, আবার কোথাও কমেছে। এ চিত্র আজ শনিবার সকালের। এদিকে জকিগঞ্জের অমলশিদ এলাকায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎসস্থলের ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) দিয়ে এখনো প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। গতকাল শুক্রবার পাহাড়ি ঢলের ধাক্কায় ডাইকটি ভেঙে গিয়েছিল।
স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বানভাসি মানুষের সূত্রে জানা যায়, জকিগঞ্জে ২৯৩টি গ্রামের মধ্যে দুই শতাধিক গ্রামই এখন প্লাবিত। সব মিলিয়ে উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। প্লাবিত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য মানুষ হাহাকার করছে।
তবে জকিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পল্লব হোম দাস প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ আছে। বানভাসি মানুষের কাছে এসব ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন দুপুরে জরুরি বৈঠকে বসেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
পল্লব হোম দাস বলেন, এখন পর্যন্ত উপজেলায় ৩৬ মেট্রিক টন চাল ও শুকনা খাবারের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে এর বাইরে আরও ৩০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দিয়েছেন।
জকিগঞ্জ ছাড়াও পানি বেড়েছে বিশ্বনাথ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়। গত দুই দিনে এসব উপজেলায় অন্তত ১৫ থেকে ২০টি গ্রাম নতুনভাবে প্লাবিত হয়েছে। জেলার অন্যান্য উপজেলার কোথাও পানি কমেছে, কোথাও পানি বাড়ছে। বানভাসি মানুষেরা জানিয়েছেন, কিছু এলাকায় পানি কমলেও তার পরিমাণ খুব কম। ফলে ঘরবাড়ি থেকে পানি এখনো সরেনি। এ অবস্থায় ভোগান্তি ঠিক আগের মতোই আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের সবশেষ আজ সকাল ছয়টায় গণমাধ্যমে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীতে পানি কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীতে পানি বাড়ছে। তবে সুরমা নদীতে পানি কমলেও এখনো পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো জানিয়েছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার এবং সুরমা পয়েন্টে ১১ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৬ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টেও পানি বেড়েছে।
আট দিন ধরে সিলেট বিভাগে ভারতের উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে। পাশাপাশি বিভাগজুড়ে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্য নদ-নদীর পানি উপচে একের পর এক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলের খেত, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। অনেকের বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকেছে। বন্যার কারণে ইতিমধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বহু পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছে।