শেষ মুহূর্তে সদরঘাটে যাত্রীর ভিড় বাড়ছে
ঈদুল আজহা উপলক্ষে শেষ মুহূর্তে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের ভিড় বাড়ছে। লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করার নির্দেশনা থাকলেও বেশির ভাগ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশনা মানছে না। লঞ্চের ছাদে যাত্রীদের সমাগম দেখা গেছে।
আজ শুক্রবার সদরঘাট টার্মিনালে ভোর থেকেই যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে। যাত্রীরা পরিবার-পরিজন ও মালামাল নিয়ে গন্তেব্যের উদ্দেশে লঞ্চে উঠছেন। অনেকে পন্টুনে মালামাল নিয়ে বসে আছেন। সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ৪৩টি রুটের লঞ্চগুলোতে অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীর চাপ বেশি ছিল। পটুয়াখালীগামী এমভি পূবালী-৫, এমভি সুন্দরবন, এমভি জামাল-৫, এমভি কুয়াকাটা-১, বরগুনাগামী এমভি শাহরুখ-২, চরফ্যাসনগামী এমভি ফারহান-৬, ফারহান-৩, হাতিয়াগামী এমভি সাব্বির-১ লঞ্চগুলোর ছাদে যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।
এদিকে টার্মিনালে দুপুর থেকে পটুয়াখালীগামী লঞ্চের সংকট দেখা যায়। এ সময় যাত্রীরা পন্টুনে বসে অপেক্ষা করেন। বিকেল থেকে পটুয়াখালীগামী লঞ্চ পন্টুনে ভিড়লে যাত্রীরা তড়িঘড়ি করে লঞ্চে ওঠেন। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার ঈদযাত্রায় সদরঘাট টার্মিনালে তুলনামূলক চাপ কম।
সদরঘাট টার্মিনাল সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ভোর পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত টার্মিনালে লঞ্চ এসেছে ৮৯টি এবং টার্মিনাল ছেড়ে গেছে ৮৬টি লঞ্চ।
পটুয়াখালীগামী লঞ্চের যাত্রী মুকুল মিয়া বলেন, সদরঘাটে যাত্রীদের জন্যে লঞ্চের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। কিন্তু টার্মিনালে এসে দেখেন, ওই রুটের কোনো লঞ্চ নেই। এরপর পরিবার-পরিজন নিয়ে টার্মিনালের পন্টুনে লঞ্চের অপেক্ষায় বসে থাকেন তিনি। বিকেলের দিকে লঞ্চ এলে টিকিট নিয়ে লঞ্চে ওঠেন।
এ দিকে গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাতিয়াগামী এমভি ফারহান-৩ ও কর্ণফুলী লঞ্চের কর্মচারীদের মধ্যে নিজেদের লঞ্চে যাত্রী ওঠানোকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানতে পেরে অভিযুক্ত এমভি ফারহান-৩ লঞ্চের চার কর্মচারীকে আটক করেন। আটক ব্যক্তিরা সদরঘাট এলাকায় কোনো লঞ্চে কাজ করবেন না—এই মর্মে মুচলেকা দিলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের পরিচালক ও এমভি অভিযান লঞ্চের মালিক হামজা লাল বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। টার্মিনালে যাত্রীর সংখ্যা কম। তবুও নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগটি সঠিক নয়।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. শহিদউল্যাহ বলেন, সকালে লঞ্চে যাত্রী ওঠানোকে কেন্দ্র করে এমভি ফারহান-৩ ও কর্ণফুলী লঞ্চের কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তিনি আরও বলেন, সকাল থেকে চাঁদপুর, পটুয়াখালী ও হাতিয়া রুটে যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে।
বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শোভন রাংসা বলেন, গরমের কারণে বেশ কয়েকটি লঞ্চের ছাদে যাত্রীরা উঠেছিলেন। তবে তাঁদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় লঞ্চ চলাচল করা যাবে না।
নৌ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো লঞ্চের যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচল ও নিরাপত্তায় নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, র্যাব ও আনসার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টার্মিনাল এলাকায় ও নদীতে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, লঞ্চে যাত্রী পরিপূর্ণ হলে লঞ্চ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী লঞ্চ চলাচল করতে হবে।