‘রবীন্দ্রনাথের গান-কবিতা মানুষ হতে উজ্জীবিত করবে’
বর্তমান অসহিষ্ণু সময়ে মনুষ্যবোধ জাগিয়ে তুলতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রেখে যাওয়া গান–কবিতা খুব কাজে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ি প্রাঙ্গণে প্রথম আলোকে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। রেজওয়ানা বলেন, ‘শুধু সাংস্কৃতিক বিষয়ে না, রবীন্দ্রনাথের গান–কবিতা আমাদের মানুষ হতে উজ্জীবিত করবে। এখন যে সময় অসাম্প্রদায়িকতা, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, অসহিষ্ণুতার এই সময় রবীন্দ্রনাথকে খুবই প্রয়োজন।’
কুঠিবাড়িতে রোববার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়। উদ্যাপনের মূল অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন রেজওয়ানা। গুণী এই শিল্পীর মতে, তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া দরকার। যাতে তারা অসাম্প্রদায়িক ও মনুষ্যবোধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়।
করোনা মহামারির পর শিলাইদহে এই প্রথম রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে। এতে অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন রেজওয়ানা। এর আগেও বেশ কয়েকবার শিলাইদহে আসা হয়েছে এই শিল্পীর। তবে এবার এসে তাঁর খুব ভালো লাগার কথা জানালেন রবীন্দ্রসংগীতের এই কান্ডারি। তিনি বলেন, যারা রবীন্দ্রনাথের গান করে, তারা এ জায়গাটা দেখুক। রবীন্দ্রনাথের স্পর্শের একটুখানি আভাস পাক। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন, কত কিছু লেখালেখি করেছেন,Ñএটা ছেলেমেয়েদের অনেক বেশি মোটিভেট করবে। সে জন্য এই বিশেষ দিনে সুরের ধারার ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসা হয়েছে।
কুঠিবাড়ির আধুনিকায়ন নিয়ে রেজওয়ানা বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, আগের তুলনায় এই কুঠিবাড়ি অনেক বেশি আধুনিকায়ন হয়েছে। সেটা একদিকে ভালো। কিন্তু খানিকটা বাড়ির একটা নির্দিষ্ট জায়গা ঘিরে যতটা সম্ভব প্রাচীন ব্যাপারটা রাখলে ভালো হতো। বাইরে দূরে ট্যুরিস্ট আকর্ষণ রাখলে ভালো লাগত। এতে মানুষ এসে পুরোনো প্রাচীন আবহ অনুভব করতে পারত। এখন যেটা, সেটা আধুনিক ট্যুরিস্ট স্পটের মতো লাগছে।’
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ের মূল অনুষ্ঠানটির আয়োজনে ছিল কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, সব কিছুর পরে সত্য ও সুন্দর সব সময় বিরাজ করবে। এই বিশ্বাস কবি অন্তরে ধারণ করতেন। তাঁর এই বিশ্বাস আঁধার কেটে আলোর পথ দেখায়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাংসদ সেলিম আলতাফ। অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।