ময়মনসিংহে পর্যটনে আছে সম্ভাবনা, নেই উদ্যোগ

ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহ্যবাহী শশী লজ
ছবি: প্রথম আলো

প্রাকৃতিক নিদর্শনে ভরপুর ময়মনসিংহ। জেলাজুড়ে আছে ঐতিহ্যবাহী ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। তবে জেলায় নেই পর্যটনবান্ধব পরিবেশ। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও স্থবির হয়ে আছে জেলার পর্যটনব্যবস্থা। অথচ এ শিল্পকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা গেলে স্থানীয় মানুষের জীবনমানেও ইতিবাচক পরিবর্তনের পাশপাশি সামগ্রিকভাবে দেশের পর্যটন খাত আরও সমৃদ্ধ হতো বলে মনে করেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ময়মনসিংহ ট্যুরিজম ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনাহীনতা ও নীতিনির্ধারকদের দূরদর্শিতার অভাবে এ অঞ্চলের পর্যটন বিকশিত হচ্ছে না। আর প্রাচীন স্থাপনাগুলোও যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। ফলে দিন দিন এই প্রাচীন স্থাপনাগুলো অস্তিত্ব হারাচ্ছে।

ময়মনসিংহ শহরেই রয়েছে শশী লজ, লোহার কুটির, গৌরিপুর লজ, আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলের মতো বিখ্যাত সব প্রাচীন স্থাপনা। দেশের ইতিহাস আর স্বাধীনতার গৌরবগাথার গল্পের সংগ্রহ রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর, বধ্যভূমি, স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভে। উপজেলাগুলোর মধ্যে মুক্তাগাছার জমিদারবাড়ি, জোড়া মন্দির, গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর জমিদারবাড়ি, সখিনা বিবির সমাধিস্থল, হালুয়াঘাটের গারো পাহাড়, ভালুকার কাদিগড় জাতীয় উদ্যান, ফুলবাড়িয়ার শালবন ও বড়বিলা বিল, ধোবাউড়া উপজেলার চীনা মাটির পাহাড় আর গারো পল্লিও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আছে দেশের একমাত্র কৃষি জাদুঘর ও মৎস্য জাদুঘর। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও জার্মপ্লাজম সেন্টারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের পাশাপাশি বিলুপ্ত প্রজাতির উদ্ভিদও সংরক্ষণ করা হয়েছে।

জেলার কৃতি সন্তান ভাষাশহীদ আব্দুর জব্বারের স্মরণে গফরগাঁও উপজেলায় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মরণে ত্রিশালে স্মৃতিকেন্দ্র ও পাঠাগার আছে। ময়মনসিংহ শহরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের চিত্রকর্ম ও তাঁর ব্যবহৃত উপকরণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জয়নুল সংগ্রহশালা। তবে এই স্মৃতিকেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়ায় এগুলো খুব বেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারছে না বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বদ্যিালয় ক্যাম্পাসে বিজয় ৭১ ভাস্কর্য
ছবি: প্রথম আলো

সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধ এ জেলা। প্রচারণার অভাবে জেলার পালাগান, জারিগান, যাত্রা, লাঠি খেলা, গারো জাতিগোষ্ঠীর জীবন–সংস্কৃতি, ওয়ানগালা উৎসবের মতো ঐতিহ্যবাহী আয়োজনগুলো আজ বিলুপ্তির পথে।

জেলায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো এতগুলো অনুষঙ্গ থাকার পরও জেলায় ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে হাতে গোনা দুই থেকে তিনটি। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো পর্যটন মোটেল গড়ে না ওঠায় পর্যটকদের আবাসন ব্যবস্থার কোনো অগ্রগতি হয়নি। সিটি মেয়র ইকরামুল হক বলেন, ভালো মানের যে দু-তিনটি হোটেল আছে, সেখানে আবাসনসংকট আছে।
ভালো ও উন্নত মানের আবাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে জেলায় বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হতো।

জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন কালাম বলেন, জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের আনাগোনা ভালো থাকলে পরিবহন, আবাসন, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বিপণিবিতানসহ সামগ্রিকভাবে জেলার আর্থসামাজিক উন্নতি হতো। এতে জেলার বেকার সমস্যাও অনেকটা হ্রাস পেত।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ হোসাইন জানান, পর্যটন খাতে কোনো বিনিয়োগ না হওয়ায় এ খাত অগ্রসর হচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে এবং নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে দেশি–বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করা যাবে।

২০১৭ সালে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ময়মনসিংহ জেলার ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম হাতে নিয়ে ‘সিটি অব আর্ট অ্যান্ড কালচার’ নামের প্রচারণা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং এ খাতে নতুন করে বড় ধরনের বিনিয়োগ না হওয়ায় পর্যটন খাতে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

তবে জেলা প্রশাসক এনামুল হক বলেন, জেলার পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম চলমান। এ ছাড়া পর্যটনের সম্ভাব্য স্থানগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রস্তাবনা দেওয়ার পাশাপাশি একটি পর্যটন মোটেল স্থাপনের জন্যও আবেদন করা হয়েছে।