ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিবান্ধব হতে হবে: দীপু মনি
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন, শিক্ষায় বিনিয়োগ শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। তিনি বিশ্বাস করেন, একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষাই মূল হাতিয়ার। সামনে আমাদের অনেক সম্ভাবনা আছে, অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের অনেক বেশি প্রযুক্তিবান্ধব হতে হবে, বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে।’
রোববার সকালে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার খাগান এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নবম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ওই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ক্যাম্পাস চত্বরে দল বেঁধে ছবি তোলা ও আকাশপানে সমাবর্তনের ক্যাপ ছুড়ে দিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন প্রায় সবাই। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় উৎসবে সব বন্ধুর উপস্থিতি আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করে।
বন্ধুদের নিয়ে ছবি তুলছিলেন ফার্মেসি বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ফাবিহা নাসিমা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি ভিন্ন ধরনের পোশাক (সমাবর্তন গাউন) ও ক্যাপ পরেছি। এটি আসলে শুধুই পোশাক বা ক্যাপ নয়, এটি সফলতার, এটি মর্যাদার। আজকে ভালো লাগা ও প্রাপ্তির খাতাটা পূর্ণ হলো।’
আবেগাপ্লুত হয়ে বিবিএর ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইনতেহাম মাসুম বলেন, এখন ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। তবে দিনশেষে জানি, সবাই কষ্ট পাবে। চেনা ভালোবাসার ক্যাম্পাস ছেড়ে বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময়টা আসলেই যন্ত্রণার হবে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মূল কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী। এ ছাড়া ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ। বক্তব্য দেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সবুর খান, উপাচার্য এম লুৎফর রহমান। পরে পাঁচটি অনুষদের ডিনরা স্প্রিং ২০১৯ থেকে সামার ২০২১ পর্যন্ত তাঁদের স্নাতক ও ¯স্নাতকোত্তরের ১২ হাজার ১৬৮ জন উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন। শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের সনদ দেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী ১৩ গ্র্যাজুয়েটকে স্বর্ণপদক দেন। এবারের সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের মোট ১২ হাজার ১৬৮ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এবারের সমাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে নতুন দুটি স্বর্ণপদক—‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী স্বর্ণপদক’ ও ‘শেখ মুজিবুর রহমান স্বর্ণপদক’ প্রবর্তন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে কৈলাশ সত্যার্থী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের অনেক স্বপ্ন থাকে। আমরা যদি সেটাকে ধরতে চাই, সম্ভব করতে চাই। তাহলে আমাদের ভেতরের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। জীবনে সময় আসবে, তখন নিজের ভেতরের আশাবাদী মানসিকতাকে জাগাতে হবে, অন্ধকার সময়ে সেটাই জীবন দিবে। আমাদের সৌন্দর্য চিনতে হবে ঐক্যের মধ্যে। তরুণদের একটা গণ্ডি আছে, যেটা ইতিহাস তৈরি করতে পারে।
ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সবুর খান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির যে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, আমাদের প্রত্যাশা, তোমরা তার সঠিক বাস্তবায়ন করবে। বস হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়নি, তোমরা হবে লিডার এবং সে শিক্ষাই তোমাদের দেওয়া হয়েছে।’
উপাচার্য এম লুৎফর রহমান বলেন, ‘আজ আমরা নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছি। নতুন জীবনে আমাদের শিক্ষার্থীরা সফলতার সঙ্গে সব পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সার্থক জীবন গড়ে তুলবে।’
সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘নতুন জীবনের এটাই শুরু। সামনের দিনগুলোতে যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এ বিশ্ববিদ্যালয় যে জ্ঞান, দক্ষতা ও সঠিক মানসিকতার সুসমন্বয় ঘটিয়ে আপনাদের যেভাবে তৈরি করে দিয়েছেন, তা আপনাদের সামনের সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং সব চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে পাথেয় হবে।’
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, সবাই আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলব। যদি এখনো ভাবছি না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার কথা, কিন্তু এটাও বলছি, একদিকে যেমন আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাই না। আরেক দিকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক—সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অবশ্যই অগ্রাধিকার দিয়ে যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা বন্ধ করব।’