নাগরিক সংগঠনের নেতার সাক্ষাৎকার
ব্রহ্মপুত্র খননে নাব্যতা ফিরবে না, লাভবান হবে দখলদারেরা
সরকারিভাবে চলছে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের খননকাজ। খননকাজ হয়েছে, এমন জায়গায় হঠাৎ চর জাগছে। এ নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে ‘ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন’ নামের নাগরিক সংগঠনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদের সঙ্গে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ব্রহ্মপুত্র নদ ক্রমশ সংকুচিত হওয়ার কারণ কী?
আবুল কালাম আল আজাদ: প্রধানত প্রাকৃতিক কারণে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র মরে যাচ্ছে। ১৭৬২, ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালে তিনটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে ব্রহ্মপুত্র তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। যমুনাকে প্রধান ধারা বানিয়েছে। জামালপুরে যেখানে বর্তমান পুরোনো ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার সংযোগস্থল, সেখানে বড় ধরনের চর পড়েছে। ফলে কালক্রমে ভাটিতে ব্রহ্মপুত্র ক্রমেই সংকুচিত হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেপরোয়া নদী দখল ও বালু উত্তোলন। এ ছাড়া বিলার ব্রিজ নির্মাণও ব্রহ্মপুত্র সংকুচিত হওয়ার অন্যতম কারণ।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার ব্রহ্মপুত্র খনন করছে। খননের পর ব্রহ্মপুত্র আগের মতো নাব্যতা পাবে বলে মনে করেন?
আবুল কালাম আল আজাদ: নাব্যতা ফেরার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কারণ, খননের আগে নদীর মরফলজিক্যাল সার্ভে করা হয়নি। খননকাজ যথাযথ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হচ্ছে না। স্রেফ দুর্নীতি আর বালুর ব্যবসা হচ্ছে। প্রকল্পে খননের জন্য তিন বছর এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুই বছর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। দুই বছর পার হয়েছে। অথচ দেখা যাচ্ছে, যেখানে যেখানে খনন হয়েছে, সেখানেই চর জেগেছে। নদের চলার পথে প্রায় সব জায়গায় দুটি বা তার চেয়ে বেশি ধারা ছিল। অথচ খননের বালু দিয়ে সেই ধারাগুলো বন্ধ করে একটিমাত্র ধারা রাখা হয়েছে। কোথাও কোথাও নদের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে এই খনন। এটি প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ। এতে নদ আর নদ থাকছে না, খালে পরিণত হচ্ছে। আশঙ্কা হয়, নাব্যতা ফিরবে না, নদটাই শেষ হয়ে যাবে। লাভবান হবে কতিপয় ব্যক্তি, বালু ব্যবসায়ী ও দখলদার। প্রকল্পটি স্থগিত করে পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: আপনার ‘ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন’ কতটুকু নাগরিক আন্দোলন হয়ে উঠেছে?
আবুল কালাম আল আজাদ: আমাদের অব্যাহত কাজের ফলে আরও বেশি মানুষ নদীর গুরুত্ব বুঝতে পারছে। প্রাণ-প্রকৃতি বা বাস্তুতন্ত্র নিয়ে মানুষের সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। প্রায় দুই বছরের চেষ্টায় আমরা নদ সুরক্ষায় সাত দফা গণদাবি প্রস্তুত করেছি। অনলাইন ও সভা-সেমিনারের মাধ্যমে জনগণের মতামত নিয়ে গণদাবি তৈরি করে হাজারো মানুষের সামনে সেই গণদাবি পেশ করা হয়েছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ব্রহ্মপুত্র নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
আবুল কালাম আল আজাদ: আমি মনে করি, পৃথিবীর সব নদীই ব্রহ্মপুত্র। সব নদী, বন, জলাশয়, পাহাড় রক্ষায় বিশ্ববাসী লড়াই করবে; এটা চাই। ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীন বাঁধ দিচ্ছে, ভারত বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। নদী রক্ষার আন্দোলন একই সঙ্গে স্থানীয় ও বৈশ্বিক না হলে ব্রহ্মপুত্রের রক্ষা হবে না। আমি চাই, সব নদীর ওপর সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ হোক। নদী দখল ও দূষণমুক্ত হোক। আন্দোলনটা বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে চাই।