‘বিএনপির ওপর হামলা করে বিএনপির নামেই মামলা’
পরিকল্পিতভাবে বিএনপির সমাবেশে হামলা চালিয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে মঞ্চ ও চেয়ার। এরপর বিএনপির নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করে মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম ওরফে মনা। তাঁর দাবি, এবারই প্রথম দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর ও নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নগরের কেডি ঘোষ সড়কে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিজ্ঞপ্তিতে এসব অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপি ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নিজেদের অবস্থান জানাতে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। ব্রিফিংয়ে মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
গতকালের ঘটনায় বিএনপির ৯২ নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলায় ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিৎ কুমার বোস বাদী হয়ে মামলাটি করেন। রাতে ওই মামলায় ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলায় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম বলেন, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনের জন্য পুলিশের অনুমতি নিয়েই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। বেলা তিনটা থেকে কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হচ্ছিল। মহানগর ও জেলার হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। সমাবেশ যখন শেষের দিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান যখন মঞ্চে, তখন পুলিশের সহায়তায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলা চালিয়ে সমাবেশ পণ্ড করে দেয়। ভাঙচুর করা হয় মঞ্চ ও চেয়ার। নেতা-কর্মীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়। হামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এরপর দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর করে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দা রেহানাসহ মহিলা দলের ১০ নেত্রীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির সব রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার অধিকার আছে। সেই লক্ষ্যে খুলনায় কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করা হয়। কিন্তু যেটা দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সরকার বিদায়ের সময় অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে। ভিন্নমতকে দমন করতে চরমপন্থা অবলম্বন করছে। যে কারণে খুলনার ইতিহাসে যেটা কখনো হয়নি, সেটাও হচ্ছে। একসময় আমরাও ক্ষমতায় ছিলাম, কিন্তু কখনো পুলিশের সহায়তায় বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে এভাবে আক্রমণ করে তা পণ্ড করে দিইনি।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আহত নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে পাঠালে সেখান থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ জন্য নেতা-কর্মীদের আমরা ন্যূনতম চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করতে পারিনি।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, হামলার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে সাংগঠনিক ও আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান তাঁরা। খুলনার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করার পেছনে যাঁরা দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।