কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত মেয়র পদপ্রার্থী মো. মনিরুল হক ওরফে সাক্কু কয়েকটি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল ও গেজেট স্থগিত করে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত করছেন তিনি। আগামী ২২ জুলাইয়ের আগেই তিনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করবেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে মনিরুল হক প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মনিরুল হক বলেন, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্র থেকে শিল্পকলা একাডেমির দূরত্ব আধা কিলোমিটার। এই পথ যেতে পাঁচ মিনিট সময় লাগে। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাঁর এজেন্টদের ফলাফল বিবরণী না দিয়ে দ্রুত চলে যান। দিশাবন্দের নতুন ও পুরোনো ভবন ভোটকেন্দ্রে ফলাফলের তালিকায় যে স্বাক্ষর ও পিন নম্বর আছে, সেটি তাঁর এজেন্টদের নয়। শালবন বিহার কেন্দ্রে ভোটের ফলাফলে তাঁর এজেন্টের কোনো স্বাক্ষর নেই। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টেরও নেই। ফলাফল ঘোষণার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার অবৈধ হস্তক্ষেপ ও অদৃশ্য রাজনৈতিক শক্তির প্রভাবে কালক্ষেপণ করার কারণে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
মনিরুল হক বলেন, ‘এটি উপস্থিত শত শত সাংবাদিক দেখেছেন। তাই আমি চার কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানাই। একই সঙ্গে গেজেট স্থগিত করারও আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছে। এখন আমি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যাব।’
২৩ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র আরফানুল হক রিফাত, ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ৯টি সংরক্ষিত ৯টি ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলরদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করতে পারবেন।
২২ জুন নির্বাচনের চারটি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বাতিল ও গেজেট স্থগিত করে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আবেদন করেন মো. মনিরুল হক।
আবেদনে মনিরুল হক বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা মেয়র পদে ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল একটি একটি করে ঘোষণা করেন। এতে মনিরুল হক টেবিলঘড়ি প্রতীকে ৪৮ হাজার ৪৯২ ভোট পান। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ৪৭ হাজার ৮৬৩ ভোট পান। ১০১টি ভোটকেন্দ্রে মনিরুল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৬২৯ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন মনিরুল। ১০১টি ভোটকেন্দ্রের ফল ঘোষণার পর প্রকাশ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা অজ্ঞাত টেলিফোন পেয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য সময় চান। এরপর তিনি তাঁর চেয়ার থেকে উঠে যান এবং ফলাফল স্থগিত করেন। আইন ও নিয়মবহির্ভূতভাবে বাকি চারটি ভোটকেন্দ্রের মেয়র প্রার্থীর ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তা কাউন্সিলর পদে ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে পদক্ষেপ নেন। তখন মনিরুল হক ও তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট প্রতিবাদ করেন। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা ৪৫ মিনিট ফল স্থগিত রাখেন। তারপর ফলাফল একটি একটি করে ঘোষণা না করে অঘোষিত চারটি কেন্দ্রের ফলাফল ১০১টি ভোটকেন্দ্রের প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে যোগ করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরফানুল হককে ৫০ হাজার ৩১০ ভোট দেখিয়ে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ৫০ হাজার ৩১০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হন। ১৬ জুন আরফানুল হককে সরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ২৩ জুন বাংলাদেশ গেজেটে মেয়রসহ নবনির্বাচিতদের নামের তালিকা প্রকাশিত হয়। ২৬ জুন ওই গেজেট বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠানো হয়। আইন অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা যাবে। অভিযোগ করার ১৮০ দিনের (ছয় মাস) মধ্যে তা নিষ্পত্তি হবে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্তুষ্ট না হলে আপিল ট্রাইব্যুনালে রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। আপিল করার ১৮০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করবেন নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনাল।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। মনিরুলের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ভোটের চার দিন পর ব্যাখ্যা দিয়েছে।