সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো মেয়র হন। এরপর একই দলের মনোনয়নে ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্য। সম্প্রতি মেয়র সিলেট নগরে পানির বিল বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। তবে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বাসিন্দারা। কয়েক দিন ধরে বর্ধিত বিল প্রত্যাহারের দাবিতে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নগরে পালিত হচ্ছে। এসব নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে।
প্রথম আলো: পানির বিল একলাফে দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তে অনেকের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নগরের অধিকাংশ বাসিন্দা বিষয়টিকে ‘গণবিরোধী’ সিদ্ধান্ত বলছেন। এ নিয়ে কী বলবেন?
আরিফুল হক চৌধুরী: শিগগিরই সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে সভায় আলোচনা করা হবে। যেহেতু পানির দাম বাড়ানোয় সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তাই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।
প্রথম আলো: কী ধরনের পুনর্বিবেচনা করা হবে? সিদ্ধান্ত কি প্রত্যাহার করা হবে?
আরিফুল হক চৌধুরী: আমরা নগরে একটা জরিপ চালিয়েছিলাম। গ্রাহকদের যৌক্তিক দাবিগুলো বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। যাঁরা নিয়মিত বিল দিয়েছেন, যাঁরা বিল দিয়ে যাচ্ছেন, অবশ্যই তাঁদের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত। আবার অনেকের বিল দিনের পর দিন বকেয়াও আছে। সাধারণ সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা করে কীভাবে বিষয়টি সমন্বয় করা যায়, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আপাতত যেটা মনে করছি সেটা হলো, আবাসিক গ্রাহকদের জন্য বিল বাড়ানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠানিক যেসব গ্রাহক আছেন, তাঁদের মিটার লাগিয়ে দেওয়া হবে। মিটারই জানাবে, তাঁরা কতটুকু পানি ব্যবহার করছেন, সে অনুযায়ী পানির বিল নির্ধারিত হবে। মোটকথা, একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে যাওয়া হবে আগামী সাধারণ সভায়।
প্রথম আলো: কিন্তু অনেকেই বলছেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে মানুষের আয় কমে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাও ভালো যাচ্ছে না। এতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক দুই জায়গাতেই অস্বাভাবিক হারে পানির বিল বাড়ানো কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
আরিফুল হক চৌধুরী: এ বিষয়ে সাধারণ সভায় আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবার সম্মিলিত মতামতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে যাঁরা নিয়মিত বিল দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের বিষয় পুনর্বিবেচনা করা হবে। সাধারণ সভা শেষে দ্রুত সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
প্রথম আলো: সিটি করপোরেশনের পানি শাখা জানিয়েছে, নগরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার অবৈধ গ্রাহক আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থান কী?
আরিফুল হক চৌধুরী: যাঁরা অবৈধ সংযোগ নিয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই বৈধ হতে হবে। নতুবা তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব অবৈধ গ্রাহকের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। দেখা যাচ্ছে, অবৈধ সংযোগ যাঁরা নিচ্ছেন, এর সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও সম্পৃক্ত। অবৈধ গ্রাহকেরা তাঁদের কারও না কারও ইন্ধনে সংযোগ নিচ্ছেন।
প্রথম আলো: আর বকেয়া বিল...
আরিফুল হক চৌধুরী: প্রায় ১৩ থেকে ১৪ কোটি টাকার বকেয়া বিল গ্রাহকদের কাছে পাওনা। দিনের পর দিন এসব বিল বকেয়া আছে। তবে এসব বকেয়া আদায়ে আমরা উদ্যোগী হয়েছি। আসলে গ্রাহকদের পানি দিতে প্রতি মাসে এক কোটি টাকার বেশি খরচ হয়। বিদ্যুতের ব্যয় বেড়েছে, উৎপাদনব্যয়ও বেড়েছে। একটা উৎপাদক নলকূপ বিনষ্ট হলে তা পুনরায় স্থাপনে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা খরচ আসে। অথচ গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে গড়ে অর্ধেক বিলও সিটি করপোরেশন পায় না। এ কারণে ভর্তুকি দিয়েই এ সেবা নগরবাসীকে দিতে হচ্ছে। এটি বিবেচনায় রেখেই পানির দাম বাড়ানো হয়েছিল। তবে, যেহেতু এ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তাই বিষয়টি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। অবশ্যই বিষয়টি দ্রুততার সঙ্গে পুনর্বিবেচনা করা হবে।