নোয়াখালী সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটিতেই নৌকার প্রার্থীরা হেরেছেন। ওই পাঁচ ইউনিয়নের চারটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও একটিতে বিএনপির সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন।
সদর উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে পাঁচ প্রার্থীর পরাজয় নিয়ে দলের ভেতর চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা প্রার্থী নির্বাচনে ভুল ছিল মনে করলেও জেলার নেতারা তা মানতে নারাজ।
জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সদর ও কবিরহাট উপজেলায় নৌকার প্রার্থীদের নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী জড়িত ছিলেন। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থীদের নানাভাবে মদদ দিয়েছেন। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের লোকজন নৌকার প্রার্থীদের হারাতে বিদ্রোহীদের পক্ষে মাঠে জোরালো ভূমিকা পালন করেছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে গতকাল সোমবার বিকেলে ও আজ মঙ্গলবার দুপুরে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে। তবে তিনি ফোন ধরেননি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তাঁর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
সদর ও কবিরহাট উপজেলা মিলিয়ে মোট ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত রোববার। ১৬টির মধ্যে ৯টিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। সাতটিতে জিতেছেন বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়টি লিখিতভাবে কেন্দ্রে জানানো হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকা কবিরহাট উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের পাঁচটিতে জয়লাভ করেছেন নৌকার প্রার্থীরা। আর দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন।
সদর ও কবিরহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত চারজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরাজয়ের প্রধান কারণ হলো যোগ্য প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া। এ ছাড়া দলের নেতাদের কেউ কেউ বিদ্রোহীর পক্ষে প্রকাশ্যে–অপ্রকাশ্যে কাজ করেছেন। আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের নৌকাবিরোধী প্রচারণা।
এখানে নৌকা হেরেছে, তা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে স্বতন্ত্র পাঁচজন জিতেছেন। তাঁদের চারজনই একসময় আওয়ামী লীগ করতেন।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন বলেন, এখানে নৌকা হেরেছে, তা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে স্বতন্ত্র পাঁচজন জিতেছেন। তাঁদের চারজনই একসময় আওয়ামী লীগ করতেন। এ ছাড়া বিএনপি জামায়াতের পুরো ভোট বিদ্রোহীদের পক্ষে গেছে।
শিহাব উদ্দিন বলেন, দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের অনেককে এরই মধ্যে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের স্থায়ী বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। একইভাবে সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়টি লিখিতভাবে কেন্দ্রে জানানো হবে।