জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে খাবার বিতরণে যুবলীগ-ছাত্রলীগের বাধা, সাংবাদিক লাঞ্ছিত
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় খাবার বিতরণ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় ঘটনার ভিডিও ধারণ করার সময় একাত্তর টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধিকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে এবং তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির অভিযোগ, ঘটনাস্থলে বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাঁরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষ্যা চন্দ্র দাশ জানান, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার জমিদারহাট, চৌমুহনী রেল গেট, চৌরাস্তা ও বাংলাবাজার এলাকাসহ পাঁচটি স্থানে দুস্থ মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ ওরফে বুলু উপস্থিত থাকার বিষয়টি আগেই থানা-পুলিশকে জানানো হয়।
যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। তাঁরা বিএনপি নেতাদের গাড়ি থেকে নামতে দেননি। মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও নীরব ভূমিকা পালন করে।
কামাক্ষ্যা চন্দ্র দাশ বলেন, সকাল ১০টার দিকে বরকত উল্যাহসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপজেলার জমিদারহাট বাজারে দুস্থ মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করতে যান। সেখানে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে তাঁরা সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে খাবার বিতরণ করে চৌমুহনী ফিরে আসেন। এরপর চৌরাস্তা এলাকাতেও যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মসূচিতে বাধা দেয়। কিন্তু তাঁরা পাল্টা কোনো সংঘাতে জড়াননি।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, সর্বশেষ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বাংলাবাজারে যান তাঁরা। এর আগে সেখানে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাঁরা যাওয়ার পর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। তাঁরা তাঁদের গাড়ি থেকে নামতে দেননি। মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও নীরব ভূমিকা পালন করে। তাঁরা স্থানীয় নেতাদের খাবার বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে ফিরে আসেন।
সাংবাদিক মিজানুর রহমান বলেন, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেন ও ককটেল বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাজারের পাশের একটি বাড়িতেও হামলা চালান। তখন তিনি হামলার ভিডিও ধারণ করছিলেন নিজের মুঠোফোনে। এ সময় যুবলীগ-ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁর হাত থেকে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন এবং তাঁকে লাঞ্ছিত করেন।
হামলার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কাউকে পাওয়া যায়নি। আজ বিকেলে বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি। তাই হামলা ও বাধার অভিযোগের বিষয়ে কারও বক্তব্য জানা যায়নি।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির নেতা বরকত উল্যাহ দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে খাবার বিতরণ করতে বাংলাবাজারে গেলে সেখানে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সাংবাদিক মিজানুর রহমান ভিডিও করতে গেলে তাঁর মুঠোফোন নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবশ্য ফোন ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।