ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ায় তরুণীর ‘আত্মহত্যা’, প্ররোচনার অভিযোগে ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ধর্ষণের মামলা করায় তরুণীকে ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া ও তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হওয়া মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাতে আবদুল মোমেন ওরফে কচি নামের স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলার চার দিন পর গতকাল সন্ধ্যায় তরুণীকে ‘আত্মহত্যার’ প্ররোচনার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই তরুণীর মা।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। দুটির বাদীই ওই তরুণীর মা। দ্বিতীয় মামলায় স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল মোমেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার আসামি নুরুল আমিনকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ওসি বলেন, ২ জুন তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন তাঁর মা। তবে মামলার আগেই আসামি নুরুল আমিন পালিয়ে যান। মামলার পর আসামিপক্ষের চাপে বাদীপক্ষ সালিসে যায়। সেই সালিসে ধর্ষণের ভিডিও সবার সামনে দেখানো হয় এবং পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, দুই বছর ধরে বন্দর উপজেলার ওই গ্রামের নুরুল আমিনের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর সূত্র ধরে নুরুল আমিন বিয়ের কথা বলে ওই তরুণীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ গত ২২ মে নুরুল আমিন ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন। তরুণী তাঁকে বিয়ের কথা বললে তিনি অস্বীকৃতি জানান। বিষয়টি ওই তরুণীর মা জানতে পেরে নুরুল আমিনকে আসামি করে বন্দর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন।
ওই তরুণীর মায়ের ভাষ্য, তিনি গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। তাঁর স্বামী দিনমজুর। তাঁরা কাজে গেলে নুরুল আমিন বাড়িতে এসে তাঁর মেয়েকে বিয়ের কথা বলে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করেন। পরবর্তী সময়ে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। এ ঘটনায় থানায় মামলা করার জের ধরে নুরুল আমিনের স্ত্রী ও ভাগনে ইব্রাহিম গত রোববার তাঁর মেয়েকে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এরপর তাঁর মেয়ে গতকাল সকাল ১০টায় নিজ ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই এলাকায় সালিস ডাকা হয়। সালিসে উপস্থিত ছিলেন বন্দর উপজেলার একটি ইউপির সদস্য আবদুল মোমেনসহ আসামিপক্ষের লোকজন। সালিস চলাকালে ধর্ষণের মামলার আসামি নুরুল আমিনের স্ত্রী ও ভাগনে ধর্ষণের ভিডিও মুঠোফোনে সালিসে উপস্থিত লোকজনকে দেখান। তাঁরা ধর্ষণের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। তখন ওই তরুণী তাঁর মাকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।