ত্রাণের আশায় রাস্তায় শত শত মানুষ
কোমর পর্যন্ত ভেজা কাপড় পরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সামিয়া বেগম। কোলে দেড় মাস বয়সী ছেলে ওসমান গনি। সন্তানকে নিজের ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে রেখেছেন, তা-ও জায়গায় জায়গায় ভেজা।
সামিয়া বেগম বলেন, খাবার, পানি কিছুই নেই। গতকাল রাত থেকে কিছু খাননি। কারও কাছ থেকে কোনো খাদ্যসহায়তাও পাননি। ছেলেটা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করছে। এদিকে তাঁর নিজেরই তেষ্টা পেয়েছে।
সামিরা বেগমের সঙ্গে কথা হয় কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল এলাকায়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। তাঁর স্বামী বাবুল মিয়া পাথরশ্রমিক। বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো কাজ নেই তাঁরও। হাতে টাকাও নেই তাঁদের।
সামিয়ারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন, সেখানে আরও প্রায় ৪৫০ জন বন্যাদুর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত ওই আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। অনেকেই না খেয়ে আছে। আশপাশের সব নলকূপ ডুবে যাওয়ার কারণে বিশুদ্ধ পানিও পাচ্ছে না তারা।
এমনই আরেকজন আলিয়া বেগম। তিনিও ওই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। তাঁর গরু আছে পাঁচটি। দুটি বাছুরও ছিল, কিন্তু পানিতে ভেসে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রের সামনেই রাস্তায় তাঁবু টাঙিয়ে রাখা হয়েছে গরুগুলো। আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা মানুষের গবাদিপশু এখানে রাখা হচ্ছে।
আলিয়া বেগম জানান, রোববার দুপুরে একটু চিড়া খেয়েছিলেন। একজন এসে ওই চিড়া আর সামান্য গুড় দিয়ে গিয়েছিলেন। সেটা এখন শেষ। খাওয়ার জন্য আর কিছুই নেই তাঁদের কাছে।
চোখের সামনে ঘর ভেঙে বাছুর আর ঘরের ধান সব ভেসে গেছে জানিয়ে আমিরা বেগম বলেন, টিনের বেড়ার ঘরটি ভেঙে গেছে। সেখানে ৮ মণ ধান ছিল। সেটাও পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ঘরের ভিটার মাটিও আর নেই।
বেলা ১১টা পর থেকে ভোলাগঞ্জের টুকের বাজার এলাকা এবং কোম্পানীগঞ্জের খাগাইল, ছোট বর্নি, বর্নি, পূর্ব ও পশ্চিম বর্নি, তেলিখাল ও থানাবাজার-সংলগ্ন এলাকায় শত শত মানুষকে সড়কের পাশে ত্রাণের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কিছু কিছু খাদ্যসহায়তা গেলেও পরিমাণে ছিল অল্প। কেউ কেউ আবার শুকনা খাবার নিয়ে গেলেও নৌকায় করে সেগুলো ভেতরের কোনো বন্যাদুর্গত গ্রামে নিয়ে যাচ্ছেন।