চাঁদপুরের ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত বালুচরটি কেটে ফেলার প্রস্তাব
চাঁদপুরের পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া—তিন নদীর মোহনা থেকে দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত বিশাল একটি বালুচর, যা ইতিমধ্যে ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে, সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কেটে ফেলার প্রস্তাব করেছে। কারণ, এটি এখন চাঁদপুর শহর রক্ষার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি পাউবোর গবেষণায় এই বালুচরের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পানির প্রবাহ চাঁদপুর শহরে প্রতিনিয়ত আঘাত হানছে। এর ফলে যেকোনো মুহূর্তে ভয়াবহ নদী ভাঙন দেখা দিয়ে চাঁদপুর শহরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সাল থেকে মেঘনা মোহনার পাশে জেগে ওঠা এই বালুচরটি একটি দ্বীপের মতো ভেসে ওঠে। নৌকা নিয়ে এক-দুজন করে ভ্রমণপিপাসু সেখানে ঘুরতে যেতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে এটি পর্যটন এলাকায় পরিণত হতে শুরু করে। এভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে সারা দেশ থেকে পর্যটকেরা শীতের মৌসুমে এখানে আসতে শুরু করেন। এভাবে বালুচরকে ঘিরে শত শত লোকের জীবিকার ব্যবস্থা হয়। সেই সঙ্গে শতাধিক নৌকার মাঝির আয়রোজগার বেড়ে যায়। কিন্তু এখন এটি চাঁদপুরের জন্য একটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন চাঁদপুর জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমরা প্রথমে খুশি হয়েছিলাম, চাঁদপুরে কক্সবাজারের আদলে এমন একটি বালুচর তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরে পাউবোর গবেষণায় জানতে পারলাম, এটি চাঁদপুরের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্য আমরাও এটিকে পরিবেশের জন্য চরম হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এটি যত দ্রুত কেটে সরিয়ে ফেলা হবে, চাঁদপুরবাসীর জন্য তত মঙ্গল বয়ে আনবে।’
গত সোমবার চাঁদপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, যেকোনো সময় এই বালুচরটি কেটে ফেলা হবে। এখন শুধু সরকারি অনুমোদন প্রয়োজন।
চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল বলেন, গত জানুয়ারিতে পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নদী গবেষণাকারী ১০ জন বিশেষজ্ঞ সমীক্ষা করে চাঁদপুর শহর রক্ষায় কয়েকটি সুপারিশ পেশ করেন, যেটি বাস্তবায়ন করতে ৩ হাজার ১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। এই প্রকল্পের মধ্যে মেঘনা নদীর পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে ‘মিনি কক্সবাজার’খ্যাত বালুচরটি ড্রেজিং করে কেটে ফেলার প্রস্তাব করা হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, এই স্থানটিকে কেন্দ্র করে শুধু চাঁদপুর নয়, আশপাশের জেলাসহ সারা দেশ থেকে হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু দল বেঁধে এখানে ঘুরতে আসছেন। বিশেষ করে বর্ষার পানি কমতে শুরু করার সময় থেকে পুরো শীত মৌসুমে এই স্থানটিতে প্রচুর মানুষের ভিড় বাড়ে।
চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল বলেন, ‘আমরা গবেষণা করে দেখেছি, এই বালুচরটি চাঁদপুর শহর রক্ষার জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। মূলত এই চরের কারণে পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে তিন নদীর মিলনস্থলের তলদেশে তীব্র ঘূর্ণিস্রোতের সৃষ্টি হয়ে নদীর পাড় প্রতিনিয়ত দুর্বল হয়ে পড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৯ সালে চাঁদপুর শহর সংরক্ষণের জন্য একটি প্রস্তাবনা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। ওই প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে পরে ২০২০ সালে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সদস্যরা এসে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনে তাঁরা উল্লেখ করেন, শহর রক্ষার জন্য ব্লক ফেলা এবং বিপরীত দিকে বাধা প্রদানকারী এই বালুচরটি কেটে ফেলা দরকার। এতে করে নদীর পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হওয়াসহ শহর রক্ষা বাঁধ নিরাপদ থাকবে। এখন এটি বাস্তবায়ন প্রয়োজন।’