খসড়া আইন নিয়ে আপত্তি

■ ২৫ জানুয়ারি এ–সংক্রান্ত বৈঠক শেষে খসড়াটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

■ ২০০২ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন ও ২০০৬ সালে মেট্রোপলিটন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

■ ৫৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই নগরের অপরিকল্পিতভাবে বিস্তার ঘটছে।

বরিশাল নগর সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার প্রায় ২০ বছর পর বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বউক) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বউক) আইন ২০২২–এর খসড়া তৈরি হয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি এ–সংক্রান্ত বৈঠক শেষে খসড়াটি জনসাধারণের মতামতের জন্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

বরিশাল নগরকে এখনো পরিকল্পিত সুন্দর নগর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনামাফিক এগোনো ও সদিচ্ছা।
মো. বায়েজিদ, নগর-পরিকল্পনাবিদ, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর

তবে এ আইনে নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হিসেবে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হয়েছে। এতে নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আপত্তি তুলেছেন। তাঁরা মনে করেন, যেকোনো উন্নয়নের জন্য এর সুফলভোগীদের সম্পৃক্ত করতে না পারলে টেকসই ও পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। খসড়াটি চূড়ান্ত করার আগে অবশ্যই গণশুনানির আয়োজন করা উচিত। বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে শক্তিশালী কমিটি গঠনের কথাও বলেছেন তাঁরা।

বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বউক) গঠনের খসড়া আইনে ৬৬টি ধারা সংযুক্ত রয়েছে। এর অনেকগুলো উপধারাও রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলেন, ‘একটি নগরের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে এখন পরিবেশ, প্রতিবেশ, পানি ব্যবস্থাপনাসহ প্রাকৃতিক বিষয়গুলো যুক্ত করা না গেলে সেই উন্নয়ন নগরবাসীর জন্য অপ–উন্নয়নে পর্যবসিত হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত খসড়াটিতে পড়ে যা দেখলাম, তাতে এতে যোগাযোগ, পানি, পরিবেশ বিশেষজ্ঞসহ বাদ পড়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

রফিকুল আলম আরও বলেন, এতে কাউন্সিলর, পানি, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি থাকা আবশ্যক। সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, নাগরিক সমাজের সমন্বয় করে কমিটি করা গেলে এর সুফল মিলবে। তবে সবার আগে নগর উন্নয়নে তৈরি করা মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়ন চাই।

২০০২ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন ও ২০০৬ সালে মেট্রোপলিটন প্রতিষ্ঠা পেলেও নগরের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য আলাদা কোনো কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়নি। ফলে ৫৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই নগরের অপরিকল্পিতভাবে বিস্তার ঘটছে।

২০১৬ সালে বরিশালে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে সরকার। তবে এখানেও রয়েছে জনবলসংকট। দুজন নগর পরিকল্পনাবিদসহ ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে এই বিভাগের কাজ চলছে। অবশ্য নগরের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য তাঁরা মাস্টারপ্ল্যান, নকশা তৈরি করলেও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সে অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করছে না।

সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি শাহ শাজেদা বলেন, নগরের খাল, জলাশয়গুলো দখল ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত ও সরকারি পুকুর–জলাশয়গুলোও বিলীন হওয়ার পথে। নগরে বহুতল ভবন উঠছে কিন্তু এ ক্ষেত্রে আইন ও পরিবেশবিধি মানার প্রবণতা কম।

শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, নগরে প্রতিদিন নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা অপসারণ হচ্ছে। তবে বিভিন্ন এলাকায় পানির কষ্ট আছে। নগরের বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোর রাস্তাঘাট ভালো নয়। শহরটিকে বাঁচাতে বড় বড় প্রকল্পের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সদিচ্ছা ও পরিকল্পনা। পুকুর ভরাট, খাল দখল রোধ ও বড় রাস্তা না রেখে ভবন করা ঠেকাতে পরিকল্পনাটি বেশি জরুরি।

নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের নগর-পরিকল্পনাবিদ মো. বায়েজিদ বলেন, বরিশাল নগরকে এখনো পরিকল্পিত সুন্দর নগর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনামাফিক এগোনো ও সদিচ্ছা। মূল শহরের বিশেষ করে বাণিজ্যিক এলাকার রাস্তাগুলো প্রশস্ত করার এখন আর সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে নগরকে যানজটমুক্ত করতে সিটি সার্কুলার রোড করা যেতে পারে। একই সঙ্গে খালগুলো খনন করে হাঁটার পথ ও পাড়ে গাছ লাগানো গেলে নগরের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি এসব খাল যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, এখন বরিশাল নগর এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন সাপেক্ষে। করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মো. ফারুক বলেন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ না থাকায় বরিশাল সিটি করপোরেশন নিজস্ব পরিকল্পনাবিদ দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। শিগগিরই আলাদা কর্তৃপক্ষ হবে। তখন সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে নগরের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুবিধা হবে।