খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ‘কুচক্রী মহল’ নোংরা রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছে। ওই শিক্ষকের মৃত্যুকে রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি (কুয়েট) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস বিভাগের অধ্যাপক সেলিম হোসেনের অকালমৃত্যুতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা গভীরভাবে শোকাহত। সেলিম হোসেন ১১ মাস আগে কুয়েট লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। যখনই কোনো নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ পান, তখন ছাত্রকল্যাণ কমিটির পক্ষ থেকে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে হলের ফাইনাল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।’
কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান ওই দিন অধ্যাপক সেলিম হোসেনের সঙ্গে দেখা করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচিতি হওয়া এবং হলের নানা কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানানোর জন্য মঙ্গলবার দুপুর ১২টার সময় প্রাধ্যক্ষ নিজ কার্যালয়ে একটি মিটিং নির্ধারণ করেন। ক্লাস শেষ করে পূর্বনির্ধারিত মিটিংয়ে যোগ দিতে শিক্ষার্থীদের আনুমানিক ৪০ মিনিট বিলম্ব হয়। পরে পথে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা হয় এবং তাঁকে বিলম্বের কারণ জানানো হয়। তখন তিনি আমাদের তাঁর কার্যালয়ে আসতে বলেন। এরপর প্রাধ্যক্ষ তাঁর কার্যালয়ে তালা খুললে শিক্ষার্থীরা তাঁর অনুমতি সাপেক্ষে ভেতরে প্রবেশ করে।’
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতা সাদমান নাহিয়ান আরও বলেন, সব শিক্ষার্থীর স্থান সংকুলান না হওয়ায় প্রাধ্যক্ষ সেলিম হোসেন সিনিয়রদের ভেতরে বসতে এবং জুনিয়রদের কিছুক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। সিনিয়রদের সঙ্গে তাঁর শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তিনি বাইরে অপেক্ষমাণ ছাত্রদের ডেকে ভেতরে আনেন। এ সময় তিনি তাঁদের বলেন, ‘আমার তো আড়াইটায় ল্যাবে কাজ আছে। আমি সন্ধ্যায় হলে গিয়ে তোমাদের সঙ্গে পরিচিত হব।’ এরপর তিনি বিদায় নিয়ে বের হন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাদমান নাহিয়ান আরও বলেন, ‘আমরা জানি না শিক্ষক সেলিম হোসেনের মৃত্যুর সঠিক কারণ কী। তবে মৃত্যুসনদ অনুসারে জেনেছি, তিনি স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি হলের অভিভাবক। হলসংক্রান্ত কথাগুলোতে তাঁর কাছে পেশ করার জন্যই তো আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। আমাদের এই দেখা করাটাকেই কেন্দ্র করে একটা পক্ষ আমাদের অপরাধী বানানোর চেষ্টা করছে। তারা শুধু অপরাধী বানানোর চেষ্টাই করছে না, বিবৃতি পর্যন্ত দিচ্ছে। উপাচার্য বরাবর দাবি জানাচ্ছি দেখা করার ফুটেজ দেখেই আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’
শিক্ষক সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সঙ্গে জড়িত কারা, এমন প্রশ্নের জবাবে সাদমান নাহিয়ান বলেন, ‘প্রথমত এখানে অনেকগুলো সংগঠনই তাদের মতো করে রাজনীতি করছে। শিক্ষকদের একটা অংশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের একটা অংশ ও শিক্ষার্থীদের একটা অংশ আছে। প্রত্যেকে ব্যক্তিগত কিছু স্বার্থের জায়গা থেকে এগুলো করছে। সামনে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন, কর্মকর্তাদের সংগঠনের নির্বাচন। এ জন্য তারা সবাই সবার জায়গা থেকে এটাকে ইস্যু বানিয়ে কথা বলছে। একই সঙ্গে আমাদের সংগঠনের অন্য অংশের কিছু নেতা-কর্মী এবং ভিন্ন মতাদর্শের কিছু শিক্ষার্থীও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, ‘আমরা তদন্তের বিপক্ষে নই। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত চাই। দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক নয়।’
আজ শুক্রবারের এ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপগণযোগাযোগ ও তথ্য সম্পাদক জামিউর রহমান, সহসম্পাদক আহসানুল আবেদীন, উপপাঠাগার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
শুক্রবার সকালে অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো সিন্ডিকেট বৈঠক শুরু হয়। শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই তা শেষ হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে আবার এ বৈঠক শুরু হওয়ার পর ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রশাসনিক ভবনে শুরু হওয়া এ সভায় উপাচার্যসহ সিন্ডিকেটের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শুক্রবার বিকেল চারটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগের পাঁচ দফা দাবিতে স্মারকলিপি
এদিকে সিন্ডিকেট সভা শুরু হওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।
এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং কুয়েটের শিক্ষকদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করে যদি দোষী পাওয়া যায় তবে তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি কোনোভাবেই বন্ধ না করা, অধ্যাপক সেলিমের পরিবারকে আগামী এক মাসের মধ্যে এক কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া, তাঁর পরিবারের চাকরিযোগ্য অন্তত এক সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী চাকরি দেওয়া এবং শিক্ষক সমিতির ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার দাবি প্রত্যাহার করা।