কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া দুধকুমারসহ ১৪টি নদ–নদীর পানি বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ২৫টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে প্রায় শতাধিক চর।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নাঞ্চল ও নদ-নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী চরাঞ্চলের মানুষ। অনেক পরিবার নৌকা ও বাঁশের মাচানে আশ্রয় নিয়ে দিন পার করছে। বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নিজেদের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য–সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এসব চরাঞ্চলের অনেকেই তাঁদের গবাদিপশু নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
আজ শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কুড়িগ্রাম কার্যালয় জানিয়েছে, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ২৩ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
চুলা জ্বালাতে পারছি না। খুব কষ্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন পার করছি
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর গ্রামের বাসিন্দা চান মিয়া জানান, তাঁর ঘরের ভেতরে বুক পর্যন্ত পানি উঠেছে। পার্শ্ববর্তী উঁচু জায়গা না থাকায় নৌকায় অবস্থান করছেন তিনি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘চুলা জ্বালাতে পারছি না। খুব কষ্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন পার করছি।’
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের আইরমারির চরের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানান, কোনোভাবে ঘরের মধ্যে মাঁচা উঁচু করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আছেন তিনি। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে ঘরে থাকারও উপায় থাকবে না আর।
পানির তোড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের এক শ মিটার ভেঙে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি গ্রাম। বিষয়টি স্বীকার করে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্ল্যাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্পিডবোট, নৌকা এবং আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দসহ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।