কুমিল্লায় গ্রামের হাসপাতালে আইসিইউ
কুমিল্লা-১০ আসনের সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর নির্বাচনী এলাকায় এই ব্যবস্থা করেছেন।
এখন চিকিৎসক, নার্সদের প্রশিক্ষণ চলছে। আগামী সপ্তাহে আইসিইউ শয্যাগুলো চালু হবে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণে আইসিইউ চালানো কঠিন হবে।
কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা দিতে এবার কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলায় ছয়টি আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) শয্যা চালু হচ্ছে। একই সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থাও থাকছে। কুমিল্লা-১০ আসনের সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য এই ব্যবস্থা করেছেন। আগামী সপ্তাহে এই সেবা চালু হবে। কুমিল্লার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন গতকাল সোমবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কুমিল্লায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ রোগীও বাড়ছে। এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রী তাঁর গ্রামের বাড়ি লালমাই উপজেলার দুতিয়াপুরের অদূরে বাগমারা ২০ শয্যা হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায়, নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসিইউ শয্যা চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। ইতিমধ্যে সেখানে সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ চালানোর জন্য চিকিৎসক, নার্সদের সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ চলছে। আগামী সপ্তাহে প্রশিক্ষণ শেষে এগুলো চালু হবে। তবে এ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে নানা কথা রয়েছে।
বাগমারা হাসপাতালে দুটি আইসিইউ শয্যার বাইরে দুটি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা, তিনটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, একটি বাইপেপ ভেন্টিলেটর, একটি সিপেপ ভেন্টিলেটর, ১২টি সিলিন্ডার সমন্বিত সেন্ট্রাল অক্সিজেন, ইসিজি ও এক্স–রে মেশিন, একটি লেরিঙ্গোস্কোপ, দুটি বৈদ্যুতিক সাকার মেশিন ও ১০টি বিশেষ শয্যা থাকবে।
বাগমারা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আনোয়ার উল্যাহ বলেন, আইসিইউ সেবা চালু রাখতে হলে পর্যাপ্ত জনবল লাগবে। আট ঘণ্টা পরপর লোক লাগবে।
তিন হাসপাতালে কর্মরত অন্তত দুজন চিকিৎসক দাবি করেন, আইসিইউ এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণে চালু করা সম্ভব নয়। এর জন্য বিশেষজ্ঞ লোকবল দরকার। কিন্তু এখানকার চিকিৎসক ও প্যাথলজির লোক দিয়ে এটি চালু করলে রোগীরা প্রত্যাশিত সেবা পাবেন না। সবার আগে জনবল বাড়াতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক বলেন, এখানে আইসিইউ চালানোর জন্য পর্যাপ্ত লোকবল নেই। এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণে এ আইসিইউ চালানো কঠিন হবে। তার ওপর বাগমারা হাসপাতালে কোনো ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে হবে। তখন রোগীর অবস্থা কী হবে?
লালমাই উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ করে দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এটা অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার। এই মুহূর্তে মন্ত্রী কোভিড পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে গ্রামেগঞ্জে স্বাস্থ্যসেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী মহোদয় তিনটি উপজেলায় ছয়টি আইসিইউ শয্যা দিয়েছেন। আমরা সেগুলোর চালানোর জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। গ্রামের মানুষ এগুলো থেকে সেবা পাবে। এসব হাসপাতালে আরও লোকবল পদায়ন করা হবে। মন্ত্রী মহোদয় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেবা উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোর (অন্তর্বিভাগ) সেবা কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন। উপজেলা প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পর এখানে হাসপাতাল পুরোদমে চালু হচ্ছে।’
৩০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল চালু হচ্ছে আজ
কুমিল্লা নগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের নওয়াব ফয়জুন্নেছা ওয়ার্ডে ৩০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল চালু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। সকাল ১০টায় কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস) এলাকার সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন এই হাসপাতাল উদ্বোধন করবেন।
সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, গত বছরের ৩ জুন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫৪ শয্যার কোভিড হাসপাতাল চালু হয়। এবার জেনারেল হাসপাতালে এই কার্যক্রম চালু হচ্ছে। এতে করোনা রোগীরা সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা, অক্সিজেন থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে।