কিশোরদের কাছে ‘দাদা’ বলে পরিচিত ওই ছাত্র
সাভারের শিক্ষক উৎপল কুমারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রের সঙ্গে একটি কিশোর গ্যাং জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ।
সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রকে নিয়ে আতঙ্কে আছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এলাকায় ছাত্রীদের উত্ত্যক্তকরণ, মারামারিসহ তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় কিশোরদের কাছে সে ‘দাদা’ হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, ওই ছাত্রের পরিবার এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। তার স্বজনেরা ওই কলেজের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছেন। আগেও একাধিকবার তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে শাসিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে।
গতকাল বুধবার প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ছাত্র তো আর একা নয়। তার একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। ওই ছাত্রসহ তার গ্যাংয়ের সদস্যদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নইলে যেকোনো সময় শিক্ষক উৎপলের মতো আমাদেরও এমন পরিণতি হতে পারে।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্কুলছাত্র মো. আলামিন বলে, ‘কলেজের সভাপতি ও পরিচালক—সবাই ওই ছাত্রের আত্মীয়। কে তাকে শাসন করবে। স্যার (উৎপল) শাসন করেছিলেন, তাই তাকে পিটাইয়া মেরে ফেলল।’
ওই দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের সাহস যে ছেলে দেখাতে পারে, সে পরে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। এখন আমরা ভয়ের মধ্যে আছি।’
ওই ছাত্রের দূরসম্পর্কের আত্মীয় কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হযরত আলী মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বলেন, অপরাধী যে-ই হোক, শাস্তি তাকে পেতেই হবে। উৎপল কুমারের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
আসামির বয়স নিয়ে প্রশ্ন
মামলার প্রধান আসামি ওই ছাত্রের বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত রোববার আশুলিয়া থানায় উৎপল কুমারের ভাই অসীম কুমার সরকারের করা মামলায় আসামির বয়স ১৬ বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রথম আলোর কাছে ওই ছাত্রের ২০২০ সেশনের বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডের কপি রয়েছে। এতে তার জন্ম ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি লেখা। এ হিসাবে আজ বৃহস্পতিবার তার বয়স হয় ১৯ বছর ৫ মাস ১৩ দিন। স্কুলে ভর্তির আগে সে উত্তরার তানজিমুল উম্মা আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল।
স্কুলের শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার বলে, ওই ছাত্রের ফেসবুক আইডির প্রোফাইলে নামের সঙ্গে ‘দাদা’ লেখা। স্থানীয় কিশোরেরা তাকে ‘দাদা’ বলে ডাকে। সে এলাকায় কিশোর গ্যাং চালায়। দশম শ্রেণির ছাত্র হলেও শিক্ষাজীবন অনিয়মিত হওয়ায় তার বয়স বেশি হবে।
আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় আসামির বয়স ১৮ বছরের কম দেওয়া হলে বিচার হবে শিশু আইনে। এ ক্ষেত্রে জামিন ও শাস্তির ক্ষেত্রে শিশু হিসেবে সে কিছু সুবিধা পাবে। নিশ্চিত হওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট থানার সহযোগিতায় বয়স ঠিক করে নেওয়া উচিত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এমদাদুল হক বলেন, মামলা দায়েরের সময় বাদী যে তথ্য দেন, সেটিই গ্রহণ করা হয়েছে। এখন তদন্তে বয়স বা অন্যান্য বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য পেলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ঠিক করা হবে।
দ্বিতীয় দিন কর্মসূচি পালন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কলেজের সামনের সড়কে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
দুপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে আসেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন সরদার। তিনি দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন।
পুলিশ সুপার প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাল (আজ বৃহস্পতিবার) থেকে পুলিশের টহল থাকবে।
অভিযুক্ত ছাত্রের বাবা গ্রেপ্তার
ওই ছাত্রের বাবাকে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর একটি ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে আশুলিয়া থানা–পুলিশ। গতকাল তাঁকে আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
গত শনিবার স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে শিক্ষক উৎপল কুমারকে মারাত্মকভাবে আহত করে প্রতিষ্ঠানটির দশম শ্রেণির এক ছাত্র। গত সোমবার ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষক মারা যান।