এসপি গাড়িতে উঠিয়ে ওবায়দুল কাদেরের কাছে নিয়ে যান

মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মসিউর রহমান সবুজ। রোববার সকালে তাঁর বাসা পৌর এলাকার চর বিভাগদী এলাকায়
প্রথম আলো

মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মসিউর রহমান ওরফে সবুজ অভিযোগ করেছেন, পুলিশ সুপারের (এসপি) গাড়িতে উঠিয়ে তাঁকে ঢাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। নিখোঁজের প্রায় ১১ ঘণ্টা পর আজ রোববার এলাকায় ফিরে তিনি এমন কথা বলেন।

এর আগে গতকাল শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সরকারি গাড়িতে ওঠার পরই নিখোঁজ হন সবুজ। নিখোঁজের প্রায় ১১ ঘণ্টা পর আজ রোববার ভোররাত পৌনে চারটার দিকে তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন।

আজ সকাল ১০টায় জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘সবুজ নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট কাজে আমার অফিসে আসেন। পরে তিনি ঢাকায় যান তাঁর ব্যক্তিগত কাজে। আমরা তাঁকে ঢাকায় যাওয়ার সময় সহযোগিতা করেছি।’

সবুজ মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘আমাকে বিকেলে হঠাৎ এসপি ফোন করে দেখা করতে বলেন। তিনি থানার ওসিকে আমার কাছে পাঠান। তখন আমি ওসির কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলার বিষয় নিয়ে এসপি আমার সঙ্গে কথা বলবেন। পরে আমি সরল মনে তাঁর গাড়িতে উঠে এসপির অফিসে যাই। সেখানে যাওয়ার পর এসপি আমাকে তাঁর গাড়িতে উঠিয়ে ঢাকায় নিয়ে যান।’

‘এসপি আপনাকে ঢাকায় কেন নিলেন?’—এমন প্রশ্নের জবাবে সবুজ দাবি করেন, ‘এসপি আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে নিয়ে যান। সেখানে ওবায়দুল কাদের আমাকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দল যাকে প্রার্থী নির্বাচন করেছে (আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম হানিফ), তাঁর পক্ষে কাজ করার জন্য বলেন। আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান।’ তাঁর দাবি, গতকাল রাত আটটার দিকে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্ধারিত কক্ষে তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা হয়। প্রায় ৩৫ মিনিট তাঁদের মধ্যে কথা হয়।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সবুজ বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। আমি কালকিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলাম। আমি দলের কাছে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নও চাইনি। আমি জনগণের হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছি। তাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুরোধে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব না। আমি নির্বাচন করব এবং শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।’

স্বতন্ত্র মেয়র পদে নারকেলগাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সবুজ বলেন, ‘এসপি আমাকে এভাবে গাড়িতে তুলে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে ঠিক করেনি। তিনি সবকিছু সত্য বলে আমাকে ঢাকায় নিতে পারতেন। তাহলে আর এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত না। এসপি আমাকে ঢাকায় ওবায়দুল কাদেরের কাছে ছেড়ে চলে যান। আমি দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা শেষ করে আমার এলাকার এক বড় ভাইয়ের গাড়িতে ঢাকা থেকে কালকিনি আসি।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের গাড়িতে ওঠার পর সবুজ নিখোঁজের সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে তাঁর সমর্থকেরা গতকাল সন্ধ্যা থেকে থানার সামনে অবস্থান নেন। পরে বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ সমর্থকেরা। একপর্যায়ে নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে সবুজের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। টানা তিন ঘণ্টার সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন। এ সময় দুই পক্ষের লোকজনের হাতে লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র দেখা যায়। সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফারণ ও গুলির শব্দও শোনা গেছে। সংঘর্ষে সময় শতাধিক দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন কমপক্ষে ৬০ জন। সংঘর্ষে গুরুতর আহত একজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এসপি মোহাম্মদ মাহবুব হাসানের ভাষ্য, সবুজের পরিবার সন্ধ্যার পর থানা থেকে সরে গেলে সেখানে অবস্থান নেন বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী সোহেল রানা মিঠুর সমর্থকেরা। তাঁরাই মূলত নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এখানে একটি তৃতীয় পক্ষ সুবিধা নেওয়া চেষ্টা করে। তবে পুলিশের তৎপর ভূমিকা থাকায় হামলাকারীরা বেশি কিছু করতে পারেননি। পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে।

আরও পড়ুন