এমএলএমের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘প্রতারণার গ্রুপ’ খুলে বসেন আহসান
রাগীব আহসান ছিলেন মসজিদের ইমাম। পরে ঢাকার একটি এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) কোম্পানিতে কাজ নেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন এহসান গ্রুপ। নিয়োগ দেন কওমি মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক ও মসজিদের ইমামদের। তাঁরা মাহফিলে অধিক মুনাফা দেওয়ার কথা প্রচার করে মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ শুরু করেন।
১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর রাগীব আহসান সম্পর্কে এমন তথ্যই জানিয়েছেন তাঁর এলাকার বাসিন্দারা। মুফতি রাগীব আহসান পিরোজপুর পৌরসভার বড় খলিশাখালী গ্রামের আবদুর রব খানের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সালে পিরোজপুর পৌরসভার খলিশাখালী এলাকায় এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর পিরোজপুর পৌর শহরের সিও অফিস মোড়সংলগ্ন এলাকায় জমি কিনে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন রাগীব আহসান। প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম দেওয়া হয় এহসান গ্রুপ।
প্রতিষ্ঠানটির এহসান মাল্টিপারপাস কো–অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, এহসান সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড, ড্যাফোডিল মাল্টিপারপাস কো–অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, এহসান বেসিক সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড এবং এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের নামের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অধিক মুনাফা দেওয়ার কথা বলে এসব প্রতিষ্ঠানের নামে সঞ্চয় আমানত নিয়ে এহসান গ্রুপ ব্যবসা করে আসছিল। প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ২০০ ব্যক্তি সদস্য (কর্মী) রয়েছে। এসব সদস্য প্রতি এক লাখ টাকা আমানতের বিপরীতে মাসে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে পিরোজপুর, পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠি ও বাগেরহাট জেলার ১০ হাজার ব্যক্তি কাছ থেকে প্রায় শতকোটি টাকা সংগ্রহ করেন।
পিরোজপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর চুঙ্গাপাশা সিনিয়র মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মো. এখলাছুর রহমান বলেন, এহসান গ্রুপের টার্গেট ছিল সাধারণ মানুষ। এ জন্য তারা মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতিনিধি নিয়োগ দেন। ইমাম ও শিক্ষকদের কথা মানুষ বিশ্বাস করে টাকা আমানত রাখেন। এ ছাড়া এহসান গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন এলাকায় মাহফিল হতো। এসব মাহফিলে তাঁরা প্রচার–প্রচারণা চালাতেন। ফলে দ্রুত সময়ে এহসান গ্রুপের নাম ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় লোকজন জানান, আড়াই বছর আগে ব্যবসায়িক অংশীদার হুমায়ুন কবিরের দেওয়া চেক ডিজঅনার মামলায় রাগীব আহসান গ্রেপ্তার হন। হাজতবাসের খবরে সদস্যদের মধ্যে আমানত খোয়ানোর আশঙ্কা দেখা দিলে গ্রাহকেরা তাঁদের টাকা ফেরত নিতে শুরু করেন। কিছুদিন পর জামিনে মুক্তি পান রাগীব। ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের মাসিক মুনাফা ও আমানতের টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে প্রায়ই প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে জামানতের টাকা ফেরত পেতে ভিড় করতেন গ্রাহকেরা। তাঁরা মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেও কোনো ফল পাননি। টাকা ফেরত চেয়ে অনেকে হামলার শিকার হয়েছেন।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার হোগলা গ্রামের মোহাম্মাদ বাবুল আহসান বলেন, ২০২০ সালের ৩ জুলাই টাকা ফেরত চাইতে গেলে এহসান গ্রুপের ভাড়াটে লোকজন তাঁর শরীরে দাহ্য তরল পদার্থ নিক্ষেপ করে। এতে তাঁর ডান হাত ও পা পুড়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে পিরোজপুর সদর উপজেলার মূলগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে রাগীব আহসান ও তাঁর চার ভাইকে আসামি করে স্থানীয় থানায় মামলাটি করেন।
পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ জেড এম মাসুদুজ্জামান বলেন, হারুন অর রশিদ নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ৯৭ জন ব্যক্তি লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৩ টাকা রাগীব আহসানের পরিচালিত এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডে জমা রাখেন। ওই টাকা রাগীব আহসান ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় হারুন অর রশিদ থানায় মামলা করেন। গত বৃহস্পতিবার পুলিশ পিরোজপুর থেকে গ্রুপটির সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান ও পরিচালনা কমিটির সদস্য খায়রুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা দুজনই রাগীব আহসানের ভাই।