দিনাজপুর বিএনপি
এক যুগ পর সম্মেলন, নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস
সর্বশেষ ২০১০ সালে জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়েছিল। সেই কমিটি বিলুপ্ত হয় ২০১৬ সালে
এক যুগ পর হতে যাচ্ছে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন। আজ শনিবারের এ আয়োজনকে আগামী জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে জেলাটিতে দলটির ঘর গোছানো হিসেবে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে দিনাজপুরের অধিকাংশ উপজেলা ও পৌরসভায় সম্মেলনের মাধ্যমে দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হয়েছে। তাই জেলা সম্মেলন উপলক্ষে উচ্ছ্বসিত নেতা–কর্মীরা। জেলার নতুন কমিটির নেতাদের বরণে মুখিয়ে আছেন তাঁরা।
এর আগে কয়েক দফায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও নানা কারণে সম্মেলন হয়নি। সর্বশেষ গত ১৪ এপ্রিল দলীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন ১৪ মে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। সম্মেলন ঘিরে নেতা–কর্মীদের মধ্যে নতুন প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলন সম্পন্নের জন্য জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রেজিনা ইসলামকে আহ্বায়ক ও আনিসুর রহমান চৌধুরীকে সদস্যসচিব করে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ সকাল ১০টায় দিনাজপুর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দ্বিতীয় পর্বে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত শহরের জেল রোডের দলীয় কার্যালয়ে ভোট গ্রহণ চলবে। উপজেলা ও পৌরসভার ২০টি ইউনিটের ১ হাজার ৯১৯ জন কাউন্সিলর গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বেছে নেবেন নতুন নেতৃত্ব।
সম্মেলন উপলক্ষে দলীয় কার্যালয় রং করাসহ সাজসজ্জা করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। শহরের কলেজ মোড় থেকে বাহাদুর বাজার রেলস্টেশনের প্রধান ফটক পর্যন্ত শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের ছবি এবং বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত ব্যানার–ফেস্টুন। সম্মেলন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার কাউন্সিলরদের মাঝে কাউন্সিলর কার্ড, ডেলিগেট কার্ড ও পোস্টার বিতরণ করা হয়। এ সময় দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, দিনাজপুরে দলীয় কোন্দল নেই, দল সুসংগঠিত আছে। যাঁরা দলের জন্য নিবেদিত, বিগত দিনে আন্দোলন–সংগ্রামে ছিলেন, কাউন্সিলররা তাঁদের হাতেই নেতৃত্ব তুলে দেবেন।
সভাপতি পদে চারজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে দুজনসহ মোট সাতটি পদে ১৬ জন প্রার্থীর নাম এসেছে। সভাপতি পদে চার প্রার্থী হলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল হালিম, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হাফিজুর রহমান সরকার এবং বোচাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাদিক রিয়াজ চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বখতিয়ার আহমেদ এবং ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান জুয়েল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সর্বশেষ ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির সম্মেলনে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুকুর চৌধুরী। ২০১৬ সালের ৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন মুকুর চৌধুরী। পরে কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০১৬ সালে দিনাজপুর–৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজওয়ানুল হককে আহ্বায়ক ও সাবেক কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১২৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান লুৎফর রহমান। মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটির আহ্বায়ক রেজওয়ানুল হক কিছুদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ। ফলে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রেজিনা ইসলাম। তিনিও অসুস্থতায় ভুগছেন।
জেলাপর্যায়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এই প্রতিবেদককে জানান, দিনাজপুর বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট নেই। যেটা আছে তা হলো শূন্যস্থান। তা পূরণ করতে সম্মেলনের জন্য অপেক্ষা।
সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়কারী দিনাজপুর পৌর মেয়র ও রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দিনাজপুর বিএনপি নতুন রূপে আবির্ভূত হবে। নেতৃত্বের জন্য অপেক্ষা মাত্র। সম্মেলন শেষ হলে নেতা–কর্মীরা একজোট হয়ে সরকারের জেল–জুলুম, অন্যায়ের প্রতিবাদে মাঠে নামবেন।