বিএম কনটেইনার ডিপোর দক্ষিণ–পূর্ব কোণের দেয়াল ঘেঁষে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। দুই বছর ধরে দোকানটি চালান মো. হানিফ (৫০)। ডিপোর শ্রমিক-কর্মচারীরাই তাঁর ক্রেতা। শনিবার রাতে ডিপোতে বিস্ফোরণের পর প্রাণ বাঁচাতে সবাই যখন ঘরমুখী, তখন আহত শ্রমিকদের উদ্ধারে বুক চিতিয়ে দাঁড়ান ক্ষুদ্র চা–দোকানি হানিফ। বাঁচার আকুতি নিয়ে নিরাপত্তা দেয়াল টপকাতে চাওয়া ৩০ শ্রমিককে একাই দেয়াল পার করেছেন তিনি।
মো. হানিফ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর এলাকার মৃত নুরুল আহাদের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের লালবেগ এলাকায় বসবাস করেন। আট সন্তানের বাবা হানিফ দুই বছর আগে বিএম ডিপোর পাশে এই চা–দোকান দেন। দোকানের আয় দিয়েই চলে সংসার।
আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর পাশের চা–দোকানটিতে বসে মো. হানিফের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতো শনিবার রাতেও তিনি দোকানে বেচাবিক্রি করছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের পর হতবিহ্বল মানুষ চারদিকে ছোটাছুটি শুরু করেন। বিস্ফোরণে আহত শ্রমিকেরা তাঁর দোকান এলাকায় ইট-সিমেন্ট ও কাঁটাতার দেওয়া উঁচু নিরাপত্তা দেয়াল টপকে পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পোড়া শরীর, ভাঙা হাত–পা আর রক্ত ঝরা শরীরে দেয়াল পার হতে পারছিলেন না তাঁরা।
হানিফ বলেন, অবস্থা বেগতিক দেখে বাড়ি যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে দোকানের চালায় উঠে আহত শ্রমিকদের উদ্ধারে লেগে যান তিনি। নিজের ছোট্ট শরীর নিয়ে আহত শ্রমিকদের দেয়াল পার করে আনাটা কষ্টসাধ্য হলেও থামেননি হানিফ। একে একে পাঁচ শ্রমিককে পার করে আনেন। এরপর স্ত্রী নাছিমা বেগম তাঁর খোঁজ করতে দোকানে আসেন। তখন স্ত্রীকে দিয়ে বাড়ি থেকে একটি কাঠের মই আনান। মই পাওয়ার পর ৪০ মিনিটে আরও ২৫ জন শ্রমিককে উদ্ধার করে প্রাণে বাঁচান তিনি। পরে আহত শ্রমিকদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অ্যাম্বুলেন্সে।
এ বিষয়ে মো. হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ডিপোতে কাজ করা বেশির ভাগ শ্রমিকই তাঁর পরিচিত। বিস্ফোরণের পর আহত অবস্থায় দোকান এলাকায় এসে তাঁদের বাঁচার আকুতি তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। তাই ভয়াবহ সেই পরিস্থিতে শুধু নিজে বাঁচার কথা না ভেবে তাঁদের উদ্ধারে এগিয়ে যান।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নিজে দরিদ্র হলেও মো. হানিফ বরাবরই উপকারী মানুষ। শনিবার রাতে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ৩০ জন শ্রমিককে উদ্ধার করেছেন। বিষয়টি জেনে তাঁর জন্য গর্ব হচ্ছে।