আপেল কুল চাষে লাভের মুখ
চার ফুট উচ্চতার একেকটি গাছ। ডালে থোকায় থোকায় ধরে আছে বরই। পরিপক্ব বরইগুলো দেখতে লাল আপেলের মতো। স্বাদে মিষ্টি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এগুলো কাশ্মীরি আপেল কুল হিসেবে পরিচিত। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ঝাকুনিপাড়া গ্রামে গোমতী নদীর তীরে এই বরইয়ের বাগান।
গ্রামের আবুল কাসেম প্রথমবারের মতো কাশ্মীরি আপেল কুলের চাষ করেন। প্রতিদিন বহু লোক তাঁর বাগানে এসে বরই কিনে নিয়ে যান। ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো। এতে আবুল কাসেম বেশ খুশি। তিনি আগামী বছর আরও বেশি পরিমাণ জমিতে এই বরইয়ের চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় কুমিল্লার গোমতী নদীর বেড়িবাঁধের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে, নদীর একেবারেই তীর ঘেঁষে ৪০ শতক জমিতে রোদের মধ্যে চিকচিক করছে বরই। সর্বোচ্চ চার ফুট উচ্চতার একেকটি গাছ। এগুলোতে বরই ধরে আছে। কিছু কিছু ডাল ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে। গাছ থেকে আপেল রঙের পাকা বরই ছিঁড়ছেন আবুল কাসেম। কুমিল্লা শহর থেকে কাশ্মীরি বরই কিনতে এখানে এসেছেন বেশ কয়েকজন। খেত থেকে সদ্য তোলা প্রতি কেজি বরই বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়।
জানতে চাইলে আবুল কাসেম বলেন, গত বছর যশোর শহরের সোহাগ নার্সারি থেকে ৩০০টি বরইগাছের চারা কিনে আনেন। এরপর মে ও জুন মাসে ঝাকুনিপাড়া এলাকার লিজ নেওয়া জমিতে এক ফুট লম্বা ২৭৫টি বরইগাছের চারা রোপণ করেন। তখন ওই গাছে কেঁচো সার ব্যবহার করেন। বরইগাছ বড় হওয়ার পর ছড়ানো ডাল ঠিক রাখার জন্য বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করেন। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে গাছগুলোতে ফুল আসে। এসব কুল প্রথমে সবুজ থাকে। পরে সেটি লাল রং ধারণ করে। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ফল পরিপক্ব হয়। এরপর থেকে বরই বিক্রি শুরু করেন। এই জমিতে বরই চাষ করতে তাঁর ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। আরও অন্তত লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম ও কুমিল্লা শহর থেকে মানুষ এসে তাঁর এই বাগান থেকে বরই কিনে নিয়ে যান। এবার ফলন ভালো হওয়ার আগামী বছর আরও ৮০ শতক জমিতে বরইয়ের চাষ করবেন। ইতিমধ্যে জায়গা নিয়েছেন। তাঁর জানামতে, কুমিল্লা অঞ্চলে আর কেউ এই জাতের বরই চাষ করছেন না। এটি কাশ্মীর থেকে আনা জাত। তাই একে কাশ্মীরি বরই বলে। দেখতে আপেলের মতো। এ কারণে একে কেউ কেউ কাশ্মীরি আপেল কুলও বলেন।
কৃষক আবুল কাসেম আরও বলেন, ছোটবেলা থেকে অভাব–অনটনের মধ্য দিয়ে তাঁর বেড়ে ওঠা। তাঁরা তিন বোন ও এক ভাই। মা-বাবা গত হয়েছেন বহু আগেই। ১৯৮৯ সালে কুমিল্লা স্টেডিয়ামের লাগোয়া খাজা নার্সারিতে তাঁর ৩০০ টাকা বেতনে চাকরি হয়। সেখানে নার্সারির গাছের পরিচর্যা করেন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা নগরের শাকতলা এলাকায় বিসমিল্লাহ নার্সারি দিই। তখন সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভিন্ন সড়কের আইল্যান্ডে ফুল ও ফলের গাছ লাগাই। এভাবে আমার পুঁজি বাড়ে। গত বছর বিসমিল্লাহ নার্সারির জায়গার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। জায়গার মালিক নবায়ন না করার কারণে আমি গ্রামে ফিরে আসি। এরপর ঝাকুনিপাড়ায় বড় ছেলের নামে শাহজাহান অ্যাগ্রো অ্যান্ড নার্সারি নামে নতুন নার্সারি দিই। এই নার্সারির আওতায় বরইবাগানের পাশে অন্য জমিতে বিভিন্ন ফুল, ফল, সবজির চারা বপন করে চারা বিক্রি করি। আমার স্ত্রী সালেহা বেগম, ছেলে শাহজাহান এই কাজে আমাকে সহযোগিতা করেন। নার্সারির আয় থেকে বড় মেয়ে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে পড়ে। ছোট মেয়ে এলাকার স্কুলে ষষ্ঠ ও ছোট ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তাদের পড়ার খরচ জোগান দেওয়া হয়।’
কুমিল্লার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, এ জাতের বরই মিষ্টি হয়। খেতে সুস্বাদু। ফলনও বেশি হয়। এতে কৃষকেরা লাভবান হন।
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বলেন, ছোটবেলা থেকে আবুল কাসেম গাছগাছালি নিয়ে পড়ে আছেন। এবার তাঁর বাগানের বরইয়ের সুনাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। কুমিল্লা শহর ও দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বরই কিনতে আসছেন। এটি একটি ভালো খবর।