আগুন–আতঙ্কে লাইভ ও ৯৯৯-এ কল করায় যাত্রীদের ওপর চড়াও লঞ্চের কর্মীরা

ঢাকা থেকে বরিশালগামী সুরভী-৯ লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরিশাল নদীবন্দরে লঞ্চের কর্মী ও যাত্রীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সুরভী-৯ লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করা এবং ৯৯৯-এ কল করায় যাত্রীদের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে লঞ্চের কর্মীদের বিরুদ্ধে। লঞ্চটি গতকাল শনিবার গভীর রাতে ঢাকা থেকে বরিশাল যাচ্ছিল। হামলার ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে দুটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং তাঁদের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।

আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নদীবন্দরে দুই দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা এবং নৌ থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তবে হামলার পরপরই অভিযুক্ত লঞ্চের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।

হামলায় আহত চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ক্যামেরাপারসন রুহুল আমিন বলেন, ‘আজ সকালে লঞ্চটি বরিশাল বন্দরে পৌঁছার পর যেসব যাত্রী রাতে সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে লাইভ দিয়েছিলেন, সেসব যাত্রীকে খুঁজে মারধর শুরু করেন লঞ্চের কর্মীরা। সেসব ধারণ করতে গেলে লঞ্চের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে স্টাফরা আমাকে এবং আমার সহকর্মী ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের দেওয়ান মোহনের ওপর হামলা করা হয়। পরে উপস্থিত ব্যক্তিরা আমাদের উদ্ধার করেন।’

হামলার খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার রাখি আক্তার, থানার ওসি আজিমুল করিমসহ পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা ঘটনার বিস্তারিত শুনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

সহকারী পুলিশ কমিশনার রাখি আক্তার বলেন, ‘সুরভী-৯ লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা আমরা শুনেছি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে লঞ্চের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অবশ্য সুরভী নেভিগেশনের পরিচালক রেজিন-উল কবির প্রথম আলোকে বলেছেন, লঞ্চে আগুন লাগেনি। সাইলেন্সার অ্যাডজাস্টরের কাপড় ভেজা থাকায় ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর সকালে নৌ বন্দরে পৌঁছার পর অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটেছে। ব্যবস্থাপক মিজানুর যাত্রী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এর আগে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে আসা সুরভী-৯ লঞ্চটির ইঞ্জিনে আগুন লাগার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাতভর লঞ্চটি মেঘনায় রাখা হয়। আজ রোববার সকালে যাত্রীদের নিয়ে লঞ্চটি নিরাপদে বরিশালে পৌঁছে।

গতকাল রাতে ঢাকার সদরঘাট থেকে সুরভী-৯ লঞ্চটি বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। রাত ১২টার দিকে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মোহনপুর মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চটির ইঞ্জিনে অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্ক ছড়ায়। যাত্রীরা ৯৯৯-এ কল করে সহায়তা চাইলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ সদস্যরা লঞ্চে গিয়ে যাত্রাবিরতিতে বাধ্য করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও সেখানে যান।

বিআইডব্লিউটিএর চাঁদপুরের বন্দর কর্মকর্তা মো. কায়সারুল ইসলাম বলেন, লঞ্চটির ইঞ্জিন রুম থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন যাত্রীরা। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে কোনো একজন যাত্রী ৯৯৯ নম্বরে কল করে সহযোগিতা চান। এরপর পুলিশ মোহনপুর এলাকায় সুরভী-৯ লঞ্চটি ঘাটে আটকে রাখা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বরিশালের উদ্দেশে লঞ্চটি যাত্রা করে।

গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামে একটি লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে এ পর্যন্ত ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৩১ জন।