চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়ে। এতে একজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে উপজেলার ধর্মপুরের চাঁদের পাড়া এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম আনোয়ার আলী (৫৫)। তিনি উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কুন্ডরকুল এলাকার মৃত কালু মিয়ার ছেলে।
পুলিশ বলছে, মারা যাওয়া ব্যক্তির শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর দাবি, মারা যাওয়া ব্যক্তি তাঁর সমর্থক ও ইটের আঘাতে আহত হয়ে মৃত্যু হয়েছে।
ওই সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিরা হলেন ধর্মপুর ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন (৪৫), আহমদুর রহমান (৫০), গিয়াস উদ্দিন (২৯), ইউপির মহিলা সদস্য প্রার্থী ফারহানা নাছরিন (৪৫), মোহাম্মদ হারুন (৪৩) ও আনজু আক্তার (৪২)।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে ধর্মপুর ইউপি নির্বাচনের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর(আনারস প্রতীক) নেতৃত্বে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা চাঁদের পাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাছির উদ্দিনের কর্মী-সমর্থকেরা দুই দিক থেকে ও সড়কের পাশের ভবনের ছাদ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীর মিছিলে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষই ইটপাটকেল ছুড়ে ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষ চলাকালে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক আনোয়ার আলী হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে বিদ্রোহী প্রার্থী ইলিয়াছ চৌধুরীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে একটি অ্যাম্বুলেন্সের আনোয়ার আলীকে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকির কারণে এত দিন এলাকায় প্রচারণায় বের হতে পারিনি। মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে চাঁদের পাড়া এলাকায় প্রথম নির্বাচনী প্রচারণায় বের হই। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা ইট-পাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান।
একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন ভবনের ওপর থেকে ইট ছুড়ে মারলে আমার সমর্থক আনোয়ার আলী বুকে আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ওই হামলায় ইউপির মহিলা সদস্য প্রার্থী ফারহানাসহ আরও কয়েকজন আহত হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজন সড়কের দুই দিকে পাহারা বসানোর কারণে আহত ব্যক্তিদের যথাসময়ে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিকেলের দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে এনে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় আনোয়ার আলী মারা গেছেন বলে জানতে পেরেছি।’
বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইলিয়াছের মিছিলে হামলা চালানোর অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কোনো লোক ইলিয়াছ চৌধুরীর প্রচারণায় হামলা করেননি। তাঁরা অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রচারণায় বের হয়েছিলেন। তাঁদের হামলায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা কামাল উদ্দিন ও আহমদুর রহমান আহত হয়েছেন। যিনি মারা গেছেন, তিনি এলাকায় ডাকাত হিসেবে পরিচিত। কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা আমরা বলতে পারি না। ’
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক কাজী সোহান প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল পাঁচটার দিকে আনোয়ার আলী নামের এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
সাতকানিয়া থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কুমার দে প্রথম আলোকে বলেন, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংঘর্ষের সময় আনোয়ার আলী নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েকজন। প্রাথমিকভাবে আনোয়ার আলীর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হবে।
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শিবলী নোমান, সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল জলিলসহ পুলিশের একটি দল।