চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা

জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তিসহ আট দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জোটের প্রতিনিধি প্রদীপ কান্তি দে।

সরকার পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাসহ আট দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে কয়েকটি সংগঠন। এসব দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার চিন্ময়সহ সবার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিও জানিয়ে আসছে সংগঠনগুলো।

সনাতনী জাগরণ জোটের আজকের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল শুক্রবার চিন্ময়সহ সব বন্দী ও আহত ব্যক্তির সুস্থতা কামনায় প্রতিটি মন্দিরে প্রদীপ প্রজ্বালন ও প্রার্থনা সভার আয়োজন। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে চিন্ময়সহ প্রত্যেক বন্দীর মুক্তি এবং আট দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সারা দেশে প্রতিটি মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাড়া–মহল্লায় মাসব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হবে। এক মাস পর প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেই গণস্বাক্ষর জমা দেওয়া হবে। আর ২৮ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন। পাশাপাশি ২৮ ফেব্রুয়ারির আগেই প্রধান উপদেষ্টার তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি সুমন কুমার রায় বলেন, চিন্ময় সন্ন্যাসী, প্রসাদ ছাড়া খাবার গ্রহণ করেন না। অথচ তিনি দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছেন। হাইকোর্ট দুই সপ্তাহের রুল জারি করেছেন। চিন্ময় দ্রুত জামিনে মুক্তি পাবেন, এমনটা আশা করলেও সুমন কুমার বলেন, চিন্ময়ের মুক্তি ঠেকিয়ে দিতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে।

জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। ওই মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ গত ২ জানুয়ারি চিন্ময়ের জামিন আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। এ নিয়ে হাইকোর্টে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়ে ১২ জানুয়ারি আবেদনটি করেন চিন্ময়। এরপর ৪ ফেব্রুয়ারি চিন্ময়ের জামিন প্রশ্নে রুল দেন হাইকোর্ট। রুলে রাষ্ট্রপক্ষকে দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

৮ জনকে হত্যা-আত্মহত্যা

আজকের সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যালঘু নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরেছে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট। নিজস্ব তথ্য ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তারা এ তথ্য তুলে ধরে।

লিখিত বক্তব্যে জোটের প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার জানান, এ সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আটজন হত্যা ও আত্মহত্যার শিকার হয়েছেন। পারিবারিক নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে পাঁচটি। মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১১টি। আর বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে পাঁচটি। ৪৭টি দোকানে হামলা হয়েছে। জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে তিনটি।

এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি চন্দন সরকার। তিনি বলেন, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে। সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি রাজেশ নাহা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।