ঘর পুড়ে ছাই, শিশুসন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকছেন পরবা লক্ষ্মী

নিজের পোড়া ঘরের পাশে শিশু সন্তানদের নিয়ে বসে আছেন পরবা লক্ষ্মী ত্রিপুরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মিরসরাইয়ের নাপিত্তাছড়া ত্রিপুরা পাড়ায়ছবি: প্রথম আলো

পাঁচ বছর আগে স্ত্রী পারবা লক্ষ্মী ত্রিপুরা, এক ছেলে ও দুই মেয়েকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে ঘর ছাড়েন শচীন্দ্র ত্রিপুরা। সেই থেকে শুরু পরবা লক্ষ্মী ত্রিপুরার কষ্টের জীবন। দিনমজুরি করে সংসারের খরচ জোগাচ্ছেন। স্বামী ঘর ছাড়ার পর দিনমজুরি করে জমানো টাকা আর এনজিওর ঋণে পুরোনো জরাজীর্ণ ঘর ভেঙে বাঁশ আর টিন দিয়ে তিন কক্ষের একটি নতুন ঘর তোলেন তিনি। দিনমজুরির আয়ে ঋণ শোধের সঙ্গে তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও চলছে। প্রতিদিনের মতো গত রোববার সকালেও কাজে বেরিয়েছিলেন পরবা লক্ষ্মী ত্রিপুরা। বিকেলে কাজ শেষে বাড়ি এসে দেখেন, তাঁর বসতঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ঘর পুড়ে যাওয়ার পর থেকে এখন ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকছেন পরবা লক্ষ্মী ত্রিপুরা। তিনি মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের নাপিত্তাছড়া ত্রিপুরাপাড়ার বাসিন্দা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন নাপিত্তাছড়া ত্রিপুরাপাড়ায় দেখা যায়, ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে বসতভিটায় বসে কাঁদছেন পরবা লক্ষ্মী ত্রিপুরা। চারদিকে পোড়া টিনের ধ্বংসাবশেষ। আগুন থেকে কাপড়চোপড়, হাঁড়ি-পাতিল, বাচ্চাদের বই-খাতা রক্ষা পায়নি কিছুই। আহাজারি করতে করতে পরবা লক্ষ্মী বলছিলেন, ‘আমি এখন কোথায় যাব। পরনের কাপড় ছাড়া আগুন আমার সব কেড়ে নিয়েছে। এই ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে কার কাছে আশ্রয় নেব আমি। কে আমার সহায় হবে।’

নাপিত্তাছড়া ত্রিপুরাপাড়ার পাড়াপ্রধান সুমন ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করার পর থেকে তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে রীতিমতো সংগ্রাম করে দিন কাটছে পরবা লক্ষ্মীর। ঋণ করে অনেক কষ্টে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছিলেন তিনি। হঠাৎ কীভাবে আগুন লেগে বসতঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘পাড়ায় তাঁর ঘরটি এক পাশে হওয়ায় আমরা কেউ ঘর পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি টেরও পাইনি। তাঁর সন্তানেরাও আরেকটি ঘরে খেলছিল। ঘর হারিয়ে এমন শীতে ছোট শিশুদের নিয়ে পরবা লক্ষ্মী ত্রিপুরা এখন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। সরকার বা সচ্ছল কোনো ব্যক্তি পরবা লক্ষ্মীর এমন দুঃখের দিনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে খুব ভালো হতো।’

আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছছেন পরবা লক্ষ্মী ত্রিপুরা
ছবি: প্রথম আলো

জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘর পুড়ে গিয়ে শিশুসন্তানদের নিয়ে পরবা লক্ষ্মী ত্রিপুরার এমন অসহায় জীবনযাপনের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’