শোক, শ্রদ্ধায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বিদায় জানানো হলো হাসান আরিফকে

সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেন প্রাঙ্গণে আজ শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের জানাজা হয়ছবি: মহিউদ্দিন ফারুক

শোক, ভালোবাসা ও ফুলেল শ্রদ্ধায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বিদায় নিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেন প্রাঙ্গণে আজ শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজার পর প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর মরদেহ লাশ বহনকারী গাড়িতে তোলা হয়। বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটের দিকে হাসান আরিফের মরদেহ বহনকারী গাড়িটি আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়ে। এ সময় জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবীর সহকর্মীদের অনেকে ছিলেন অশ্রুসিক্ত।

আরও পড়ুন

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ গতকাল শুক্রবার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

হাসান আরিফ ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তিনি দেশের ১১তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ২০০১ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বরের বায়তুল আমান মসজিদে গতকাল বাদ এশা হাসান আরিফের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাসান আরিফের মরদেহ তাঁর দীর্ঘদিনের প্রিয় কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আনা হয়। দীর্ঘদিনের সহকর্মী, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও পরিচিতজনেরা ছুটে আসেন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। এরপর ইনার গার্ডেনে জানাজা হয়।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ, পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন, সাবেক প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর–উল–ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রমুখ জানাজায় অংশ দেন।

জানাজার আগে মরহুমের জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন হাসান আরিফের ছেলে মোয়াজ আরিফ। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন হাসান আরিফের জুনিয়র আইনজীবী আশিক আল জলিল।

হাসান আরিফ সম্পর্কে স্মৃতিচারণা ও বক্তব্য দেওয়ার কার্যক্রম সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

‘আইনের জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল বাংলাদেশ’

জানাজার আগে প্রধান বিচারপতির লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন। এতে বলা হয়, হাসান আরিফের মৃত্যুতে বাংলাদেশ আইনের জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল।

ইনার গার্ডেন প্রাঙ্গণে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘উনি (হাসান আরিফ) আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাঁকে হারানোয় বারে (আইনজীবী সমিতি) একটা শূন্যতা সৃষ্টি হবে। ভালো ও অভিজ্ঞ আইনজীবী বন্ধুকে হারিয়েছি। একের পর একজনকে হারাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘উনি (হাসান আরিফ) সেই ধরনের লোক ছিলেন, যাঁরা আইনজীবী হিসেবে অভিজ্ঞ এবং সমাজ ও দেশের প্রতি দরদি।’

ড. কামাল বলেন, হাসান আরিফ সব সময় ধর্ম নিরপেক্ষ ছিলেন। সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য একজন যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন।

হাসান আরিফ অসাধারণ আইনজীবী ছিলেন উল্লেখ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘তাঁর সাবমিশন (আদালতে শুনানিতে বক্তব্য উপস্থাপন) অনুকরণীয়। একজন ভালো আইনজীবী ও একজন ভালো মনের মানুষকে আমরা হারিয়েছি, যেটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে আমাদের।’