২২ সেকেন্ডে মোটরসাইকেল চুরি
মালিক মোটরসাইকেল রেখে ঈদগাহের ভেতরে খোলা জায়গায় হাঁটাহাঁটি করতে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে হেলমেট পরা এক তরুণ ঘটনাস্থলে হাজির। অত্যন্ত কৌশলে মোটরসাইকেলটির দুটি তালা খুলে ফেললেন। সময় লাগল মাত্র ২২ সেকেন্ড। এরপর মোটরসাইকেল চালু করেই চম্পট দিলেন।
৬ আগস্ট রাতের এ ঘটনা সিলেটে নগরের শাহি ঈদগাহ এলাকার। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় (সিসি ক্যামেরা) ঘটনাটি ধরা পড়েছে। এখন পর্যন্ত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা যায়নি কিংবা চোর ধরা পড়েনি।
সিলেট নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, গত এক মাসে নগরে ১৩টি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ কাজে সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র জড়িত। কোনো কোনো চক্রের সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষ। এত কম সময়ে তারা নকল চাবি দিয়ে মোটরসাইকেলের তালা খুলে ফেলে যে মালিক বা অন্য কারও কিছুই করার থাকে না।
নগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট মাসে ওই ১৩টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে মহানগরের ছয়টি থানা এলাকা থেকে। এসব ঘটনায় ১০টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং তিনটি মামলা করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে; জিডি হয়েছে সাতটি। জালালাবাদ থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে দুটি। এ ছাড়া বিমানবন্দর থানা, দক্ষিণ সুরমা থানা ও মোগলাবাজার থানায় একটি করে জিডি হয়েছে। তবে শাহপরান থানায় আগস্ট মাসে মোটরসাইকেল খোয়া যাওয়া কিংবা চুরি হওয়ার কোনো মামলা কিংবা জিডি নগরের কোনো থানায় হয়নি।
নগরের শাহি ঈদগাহ এলাকা থেকে চুরি হওয়া মোটরসাইকেলটির মালিক মুহাম্মদ ফজলুর রহমান। নগরের জালালাবাদ আবাসিক এলাকার এই বাসিন্দা পেশায় আইনজীবী।
ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, প্রায় প্রতি রাতেই তিনি শাহি ঈদগাহের ভেতরের খোলা জায়গায় গিয়ে হাঁটাহাঁটি করেন। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করে তিনি কর্মস্থলে অথবা বাসায় ফেরেন। ৬ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকেও গিয়েছিলেন। শাহি ঈদগাহের উত্তর পাশের প্রবেশদ্বারের পাশে নিজের মোটরসাইকেলটি রাখেন। এরপর ঈদগাহের ভেতরে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। ঈদগাহের ভেতরে উত্তর পাশ থেকে দক্ষিণ পাশে হেঁটে ঘুরে আসতে তিন মিনিটের মতো সময় লাগে। প্রতিবার ঘুরে আসার পর তিনি মোটরসাইকেলটি যথাস্থানে আছে কি না, খেয়াল করতেন। রাত পৌনে নয়টার দিকে হঠাৎ তিনি লক্ষ করেন, মোটরসাইকেলটি যথাস্থানে নেই। এরপর ঈদগাহের বাইরে বের হয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সেটি পাননি।
ফজলুর রহমান এ ঘটনায় পরদিন সিলেট কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন। শুধু জিডি করেই বসে থাকেননি, তিনি নিজেই শাহি ঈদগাহ এলাকার হাজারীবাগ আবাসিক এলাকার সামনে বসানো সিসি ক্যামেরা থেকে ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করে পুলিশের কাছে দিয়েছেন।
প্রায় এক ঘণ্টার ওই ভিডিও চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফজলুর রহমান রাত ৮টা ২২ মিনিটের দিকে শাহি ঈদগাহে প্রবেশ করেন। ওই সময়ে আশপাশে থাকা কয়েকজন তরুণ তাঁর ওপর নজর রাখছিলেন। একপর্যায়ে মোটরসাইকেলটির পাশে এসে কয়েকজন একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আলাপ শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরই ঈদগাহের ভেতর থেকে বের হন হেলমেট পরা এক তরুণ। তিনি দ্রুত হাত চালিয়ে মোটরসাইকেলটির দুটি তালা খুলে ফেলেন। তড়িঘড়ি করে মোটরসাইকেল চালু করে নিয়ে চলে যান।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, সিলেট মহানগর এলাকায় মোটরসাইকেল চুরির চক্রগুলো সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে। চক্রের সদস্যদের কাছে থাকে ‘মাস্টার কি’ (বিশেষ চাবি)। এই চাবি দিয়ে যেকোনো মোটরসাইকেলের তালা খোলা যায়। চক্রটির সদস্যরা চুরির আগে সংশ্লিষ্ট এলাকা একাধিকবার রেকি (ঘুরে দেখা) করে যায়। মোটরসাইকেল চালু না হওয়া পর্যন্ত আশপাশের পরিস্থিতির ওপর চক্রের সদস্যরা নজর রাখে। এ ধরনের চক্রের অনেক সদস্যই বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু পরে জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আবার পুরোনো পেশায় জড়িয়ে পড়ছে।
ফজলুর রহমানের মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে আছেন সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইবাদুল্লাহ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মোটরসাইকেল চুরির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ওই এলাকার ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। মোটরসাইকেলটি উদ্ধার ও চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।
সিলেট মহানগর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন এলাকায় ১১০টি ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, সিলেট সিটি করপোরেশন এবং মহানগর পুলিশের সমন্বিত উদ্যোগে এসব ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। চলতি মাসের শেষ দিক থেকে ক্যামেরাগুলো পুরোদমে সক্রিয় হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. জেদান আল মুসা। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার ঘটনাগুলো পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।