স্কুলে অনুপস্থিত দেখিয়ে জরিমানা!
বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির জন্য জরিমানা করা হচ্ছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য ‘মনগড়া’ অনুপস্থিতি দেখানো হচ্ছে। এভাবে প্রতি মাসে গড়ে লাখ টাকা আদায় করছে প্রতিষ্ঠানটি।
অভিভাবকদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে প্রভাতি শাখায় ক্লাস শুরুর নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে সাতটা। কিন্তু ৭টা ২০ মিনিটের পর প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সময়ের পরে বিদ্যালয়ে পৌঁছানো শিক্ষার্থীদের ফটকে আটকে রেখে নাম, রোল ও শ্রেণি লিখে স্কুলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। পরে হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখিয়ে দৈনিক ১০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়। এভাবে প্রতি মাসে গড়ে লাখ টাকা আদায় করছে কর্তৃপক্ষ।গত সাত মাসে এভাবে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিত দেখিয়ে সাত লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রভাতি শাখার নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। ক্লাস শুরুর নির্ধারিত সময়ের ৮ থেকে ১০ মিনিট আগে ফটকে উপস্থিত হলেও শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিত উল্লেখ করে অভিভাবকদের কাছে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। পরের মাসে বেতনের সঙ্গে জরিমানার ১০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলে জরিমানা আদায়ের কোনো বিধান নেই। বগুড়া শহরের নামীদামি কোনো স্কুলেই এভাবে জরিমানা আদায় করা হয় না। তবে কোনো শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলে মোট নম্বর কমে যায়। অথচ এপিবিএন স্কুল অ্যান্ড কলেজে চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকেই অনুপস্থিত ও দেরিতে আসা শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিত দেখিয়ে দৈনিক ১০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির একটি সূত্রে জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৪ হাজার ৫০০। গত ফেব্রুয়ারিতে ৭৩৪ জনকে অনুপস্থিত দেখিয়ে ৭৩ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। মার্চে ১ হাজার ৫১২ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনুপস্থিতির কারণ দেখিয়ে জরিমানা আদায় করা হয় ১ লাখ ৫১ হাজার ২০০ টাকা। এপ্রিলে ১ লাখ ১৫ হাজার ১০০ এবং মে মাসে ২৭৭ জন শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিতি দেখিয়ে ২৭ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করে কর্তৃপক্ষ। সবচেয়ে বেশি জরিমানা আদায় করা হয়েছে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে। জুলাইয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ ও আগস্টে ১ লাখ ৭২ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করে প্রতিষ্ঠানটি।
বগুড়া শহরের উপশহর এলাকার একজন অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে নার্সারিতে পড়ছে। সকাল সাড়ে সাতটায় ক্লাস শুরু হলেও বাসা থেকে রিকশা পেতে দেরি হওয়ায় গত ৭ এপ্রিল বিদ্যালয় ফটকে পৌঁছাতে ৭টা ২০ বেজে যায়। ততক্ষণে ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। নাম, ক্লাস ও রোল লিখে নেওয়ার পর বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়। পরে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে ওই দিন তাঁর ছেলে অনুপস্থিত বলে জানানো হয়। মাস শেষে ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ এ টি এম মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রভাতি শাখার পাঠদান শুরুর ১০ মিনিট আগে প্রতিষ্ঠানের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়, এটা ঠিক। তবে কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দেরিতে আসার কারণে জরিমানা আদায়ের বিষয়টি ভিত্তিহীন। তিনি দাবি করেন, দেরিতে আসা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ডায়েরিতে কেবল নোট লিখে নিয়ে ক্লাসে ঢুকতে দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থতা বা যৌক্তিক কারণে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে এবং অভিভাবকেরা আগে থেকে শ্রেণিশিক্ষককে তা জানালে কোনো জরিমানা আদায় করা হয় না। তবে প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়ে কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, শতভাগ উপস্থিতি ও ভালো ফলাফল নিশ্চিত করতেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে জরিমানা আদায়ের নিয়ম চালু করা হয়েছে।
বগুড়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমান উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ক্লাসে অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের কোনো বিধি নেই। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।