মুখোশধারীর গুলিতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের শিল্পী নিহত
কক্সবাজারের আলোচিত ‘ঈদগাহ-ঈদগড়-বাইশারি’ সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের শিল্পী জনি দে (১৮)। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে সড়কের ঈদগাহ ইউনিয়নের হিমছড়ি ঢালা (পাত্তারা) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জনি রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের চরপাড়ার তপন দের ছেলে। তিনি ঈদগাহ ফরিদ আহমদ ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার শিক্ষার্থী ছিলেন।
এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজমিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গুলিতে ওই কণ্ঠশিল্পীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। দোষীদের ধরতে সেখানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ডাকাতের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশ ও জনির সঙ্গে থাকা তাঁর বাবা তপন দে জানান, গতকাল বুধবার রাতে জেলার চকরিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন জনি দে। আজ সকালে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে জনি ও তাঁর বাবা চকরিয়া থেকে বাড়ির পথে রওনা হন। সকাল আটটার দিকে অটোরিকশাটি ঈদগাহ-ঈদগড়-বাইশারি সড়কের হিমছড়ি ঢালায় পৌঁছালে মুখোশধারী কয়েকজন গাড়িটির গতিরোধ করেন। এরপর জনিকে গুলি করে তাঁরা জঙ্গলে চলে যান।
নিহত জনির বাবা তপন দের ভাষ্য, মুখোশধারী ব্যক্তিরা কাউকে কিছু না বলে শুধু জনিকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে গুলি করেন। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হলে তাঁরা জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যান। তাঁর সন্দেহ, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ, দুর্বৃত্তরা তাঁকে (বাবা) ও অটোরিকশা চালককে কিছু বলেননি বা তাদের সঙ্গে কিছু করেননি।
পারিবারিক সূত্র জানায়, জনি বাড়ি থেকে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান পরিবেশন করে টাকা উপার্জন করতেন। এলাকায় তাঁর বেশ জনপ্রিয়তাও আছে। এলাকায় কারও সঙ্গে জনির শত্রুতা নেই।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ঈদগাহ-ঈদগড়-বাইশারি সড়কের দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার। কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাহ, রামু উপজেলার ঈদগড় এবং বান্দরবানের বাইশারি ইউনিয়নের কিছু কিছু অংশ পড়েছে এই সড়কে। সড়কের পাশে পাহাড় আর পাহাড়। তার ওপর সরু সড়কটি ভাঙাচোরা। ডাকাতি ও অপহরণের ভয়ে এই সড়কে সন্ধ্যার পর যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ঈদগাহ থেকে রামুর ঈদগড় বাজারের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। সড়কের গজালিয়া, ঈদগড় ঢালা, ছগিরাকাটা, হিমছড়িঢালা, ব্যাঙডোবার মুখসহ কয়েকটি এলাকায় প্রায় সময়ই ডাকাতি ও মুক্তিপণের জন্য লোকজনকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। ওই সড়কের আশপাশে তিনটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় ডাকাত দলকে প্রতিরোধ সম্ভব হয়ে ওঠে না।
রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়ন বিট পুলিশিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাত আটটা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সময়ে এই সড়কে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ। গত তিন বছরে এ সড়কে ডাকাতের গুলিতে অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। মুক্তিপণের জন্য অপহৃত হয়েছেন অন্তত ৮০ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে একাধিক বন্দুকযুদ্ধে কয়েকজন ডাকাতও নিহত হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনীর উল গীয়াস প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের নিরাপত্তা রক্ষায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের ধরার চেষ্টা চলছে।