ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ
বৃদ্ধের অভিযোগ, সালিস বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান ৪০ হাজার টাকা জরিমানার রায় ঘোষণা করেন। বৈঠকেই দুই চৌকিদারকে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা দিয়ে গ্রামের লোকজন ও থানা-পুলিশ মেটাবেন বলে সালিসে জানান চেয়ারম্যান।
নওগাঁর বদলগাছীতে ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি গতকাল সোমবার থানায় ও ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ব্যক্তি ও তাঁর শ্যালকের বাড়ি পাশাপাশি। গত বুধবার তিনি তাঁর শ্যালকের বাড়িতে যান। সে সময় তাঁর শ্যালক বাড়িতে ছিলেন না। কিছুক্ষণ পর শ্যালক বাড়িতে এসে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ভগ্নিপতিকে কথা বলতে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে খবর দেন। বিলাসবাড়ি ইউপির চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান ওরফে কেটু সেখানে চৌকিদার নিয়ে হাজির হন। শ্যালকের স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক আছে, এমন অভিযোগ তুলে চেয়ারম্যান বৃদ্ধকে আটকে রেখে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। প্রথমে বৃদ্ধ টাকা দিতে রাজি হননি। চেয়ারম্যান তখন থানা-পুলিশের কথা বলে হুমকি-ধমকি দেন। লোকলজ্জার ভয়ে বৃদ্ধ তাঁর আত্মীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হেলাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হেলাল দেড় লাখ টাকায় মধ্যস্থতা করলে গভীর রাতে বৃদ্ধকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সালিস বৈঠক বসার আগেই তাঁকে ইউপি চেয়ারম্যানের বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ইউপি সদস্য হেলালের হাতে দেড় লাখ টাকা তুলে দেন। এ সময় সেখানে ওয়ার্ড সদস্য আনছার আলী, প্রতিবেশী আজাদুল, সিরাজ ও হাসান উপস্থিত ছিলেন। দেড় লাখ টাকা বুঝে পাওয়ার পর ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর বাড়ির আঙিনায় সালিস বৈঠক বসান। বৈঠকে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
আমাকে যে টাকা দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের সামনেই চেয়ারম্যানকে দিয়েছি।
বৃদ্ধের অভিযোগ, সালিস বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান ৪০ হাজার টাকা জরিমানার রায় ঘোষণা করেন। বৈঠকেই দুই চৌকিদারকে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা দিয়ে গ্রামের লোকজন ও থানা-পুলিশ মেটাবেন বলে সালিসে জানান চেয়ারম্যান। পরে ইউপি চেয়ারম্যান ও মধ্যস্থকারী ইউপি সদস্য হেলালের কাছে বাকি ১ লাখ টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাঁরা দেননি। নানা টালবাহানা শুরু করেন।
আমাকে সালিস বৈঠকের আগে কেউ টাকা দেয়নি। সালিস বৈঠকে ৪০ হাজার টাকায় ঘটনাটি আপসরফা হয়েছে। এখন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
গ্রামের বাসিন্দা হাসান আলীর ভাষ্য, সালিস বৈঠক বসার আগেই ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ইউপি সদস্য হেলালের হাতে দেড় লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। হেলাল আবার সবার সামনে সেই টাকা চেয়ারম্যানের হাতে দিয়েছেন। কিন্তু সালিস বৈঠকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মধ্যস্থতাকারী ইউপি সদস্য হেলাল হোসেন বলেন, সালিস বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান ৪০ হাজার টাকায় ঘটনাটি মিটিয়েছেন। বৈঠকের আগে কত টাকা দেওয়া হয়েছিল, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে যে টাকা দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের সামনেই চেয়ারম্যানকে দিয়েছি।’
তবে ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান দাবি করেন, ‘আমাকে সালিস বৈঠকের আগে কেউ টাকা দেয়নি। সালিস বৈঠকে ৪০ হাজার টাকায় ঘটনাটি আপসরফা হয়েছে। এখন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. আবু তাহির বলেন, তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।