রান্না ও খাওয়ার আয়োজন চলাকালে ব্রাশফায়ার
বান্দরবানের রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারা বাজারপাড়ায় আজ মঙ্গলবার সকালে অতর্কিত হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এমএন লারমার বা সংস্কার দলের ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত তিনজন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে এমএন লারমা বা সংস্কার দলের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা শাখার সভাপতি রয়েছেন।
পুলিশ ও বাঘমারা বাজারপাড়াবাসী জানান, সকাল ৭টার দিকে জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে জেএসএস-এমএন লারমা দলের জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে ১৪-১৫ জন দলীয় সদস্য জড়ো হন। তাঁরা কেউ রান্না করছিলেন, কেউ খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনে ছিলেন। এমন অবস্থায় অতর্কিতে তাঁদের ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলি ছোড়ে হামলাকারীরা। ১০-১৫ মিনিট গুলি ছোড়ার পর হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে জেএসএস-এমএন লারমা দলের জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যা (৫৫), বিমল কান্তি চাকমা ওরফে বিধু বাবু (৬০), প্রগতি চাকমা ওরফে প্রদীপ (৬৫), ডেভিড মারমা (৫৫), জয় ত্রিপুরা (৪০), জিতেন ত্রিপুরা (৪২) মারা যান।
রতন তঞ্চঙ্গ্যা ছাড়া নিহত অন্যদের সবার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলায় বলে এমএন লারমা দলের নেতারা জানিয়েছেন। বাঘমারা বাজারসংলগ্ন পাড়াটি বাঘমারা বাজারপাড়া হিসেবে পরিচিত।
ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় রাজবিলা ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য শৈএনু মারমার মেয়ে হ্লাওয়াংসিং মারমা (২৫), জেএসএস-এমএন লারমার দলের ক্যাডার খাগড়াছড়ির রামগড়ের বিদ্যুৎ চাকমা (৪০) ও দীঘিনালার নিহার চাকমাকে (৩৪) বান্দরবান হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
বাঘমারা বাজারপাড়ার লোকজন জানিয়েছেন, প্রায় দুই মাস ধরে বাঘমারা, নোয়াপতং এলাকায় জেএসএস-এমএন লারমা দলের নেতা-কর্মী-সদস্যরা অবস্থান করছেন। তাঁরা সবাই বহিরাগত এবং খাগড়াছড়ির চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা। গত মাসের শেষে দিক থেকে তাঁরা বাঘমারা বাজারে অফিস ও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। তাঁরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান এবং জেএসএস মূল দলের নেতা-কর্মীদের খুঁজতে থাকেন। ১৫ জুন একবার রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছিল। তখনো জেএসএস-এমএন লারমা দলের এক সদস্যকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জেএসএস-এমএন লারমা দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মালেক বম বলেন, জনসংহতি সমিতির মূল দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সকালে তাঁরা খাওয়া-দাওয়া করার জন্য বাঘমারা বাজারের অফিস থেকে দলের সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে এসেছিলেন। এ সময় কাছ থেকে জেএসএস-মূল দলের ক্যাডাররা তাঁদের ওপর গুলি ছোড়ে। এতে নিহত ছয়জনের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি প্রগতি চাকমা ওরফে প্রদীপ, বিমল কান্তি চাকমা ওরফে বিধু বাবু, কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদকক ডেভিড মারমা রয়েছেন। দলের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা বাইরে অবস্থান করার সুযোগে তাঁদের ওপর সশস্ত্র হামলা করা হয়েছে বলে মালেক বম জানিয়েছেন।
বান্দরবান সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিদ্যুৎ চাকমা জানিয়েছেন, তাঁরা খাগড়াছড়ি থেকে মে মাসে বান্দরবানে এসে প্রথমে বাঘমারা বাজারপাড়ায় দলীয় সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে বাঘমারা বাজারের একটি দোতলা ভবনে অফিস নিয়ে ২৫-৩০ জন থাকেন। সেখান থেকে সকাল, দুপুর ও বিকেলে বাজারপাড়ায় গিয়ে রান্নাবান্না করে খাওয়া-দাওয়া করেন। সকালে তিনি যখন রান্না করছিলেন, তখন তাঁদের লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করা হয়েছে। এতে তাঁর ডান বাহুতে গুলি লেগেছে। একইভাবে নিহার চাকমাও ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের প্রতিরক্ষা দলটি রাজেন্দ্রপাড়ায় অবস্থানের সুযোগে জেএসএস মূল দলের অস্ত্রধারীরা হামলা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
চিকিৎসকেরা নিহার চাকমা ও বিদ্যুৎ চাকমা নামে দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আক্তার বলেন, সকালে কে বা কারা কার ওপর গুলি করেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এক নারীসহ তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।