ধর্ষণের পর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মেয়রপুত্র গ্রেপ্তার
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় গত শনিবার রাতে দ্বাদশ শ্রেণির এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ ব্যাপারীর ছেলে মাসুদ ব্যাপারীকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনাটি ঘটে শনিবার সন্ধ্যায় জাজিরা পৌর এলাকার একটি মহল্লায়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী গতকাল রোববার দুপুরে জাজিরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন।
মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ বলেছে, জাজিরার একটি গ্রামের বাসিন্দা ওই কলেজছাত্রী পড়ালেখার পাশাপাশি একটি রোগনির্ণয়কেন্দ্রে কাজ করেন। শনিবার বিকেলে মাসুদ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ওই ছাত্রীকে বাড়িতে আসতে বলেন। ছাত্রীটি রোগনির্ণয়কেন্দ্রে কাজ শেষে সন্ধ্যা সাতটার দিকে মাসুদের বাড়িতে যান। সেখানে মাসুদ ছাড়া অন্য কাউকে না দেখে তিনি ফিরে আসার চেষ্টা করেন। এ সময় মাসুদ তাঁকে ঘরে আটকে দুই দফা ধর্ষণ করেন এবং পরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি পালিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে চিৎকার দেন। তখন স্থানীয় কয়েকজন নারী তাঁকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা এসে রাত ১০টার দিকে তাঁকে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি নিয়ে যান। এরপর মুলনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল আমীন হাওলাদারের সহায়তায় ছাত্রী ও তাঁর পরিবার গতকাল দুপুরে থানায় গিয়ে মামলা করেন।
নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী বলেন, ‘ধর্ষণের পর মাসুদ আমার শ্বাসনালি চেপে ধরে হত্যার চেষ্টা করে। আমি অচেতন হয়ে পড়লে সে বাথরুমে যায়। কিছুক্ষণ পর চেতনা ফিরলে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে চিৎকার করি।’
ছাত্রীর বাবা বলেন, তাঁরা গরিব মানুষ। মেয়েটা খণ্ডকালীন কাজ করে পড়ালেখার খরচ জোগায়। মাসুদ এভাবে তাঁর সর্বনাশ করবেন তা বুঝতে পারেননি। তাঁরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে থানায় না গিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় থানায় যান।
জাজিরা থানাহাজতে থাকা মাসুদ ব্যাপারী বলেন, পারিবারিক সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য শনিবার সন্ধ্যায় ওই ছাত্রী মাকে নিয়ে তাঁর কাছে আসেন। কাজ শেষে তাঁরা সন্ধ্যার পর তাঁর বাসা থেকে চলে যান। ধর্ষণের অভিযোগ সঠিক নয়। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।
শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া ও জাজিরা সার্কেল) কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় মাসুদকে শনিবার রাতে আটক করা হয়। কিন্তু নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শনিবার রাতে পুলিশ দুই দফা তাঁদের বাড়ি গিয়ে কাউকে পায়নি। যেকোনো কারণে তাঁরা বাড়ির বাইরে ছিলেন। মামলা করতে ভয় পাচ্ছিলেন তাঁরা। ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় পুলিশ তাঁদের খুঁজে বের করে। এরপর ওই ছাত্রী মাসুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।
কামরুল হাসান বলেন, গতকাল শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে।