ঝিনাইদহে সরকারি গুদামে চাল বিক্রিতে গুনে গুনে পয়সা আদায়

>
  • জেলার ছয় উপজেলায় এ বছর ১৫ হাজার ৯২৭ মেট্রিক টন চাল ক্রয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে জেলার ৪৩০ জন মিলমালিকের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
  • শুধু সদর উপজেলায় ৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচ উপজেলায় ৭ হাজার ৪২৭ মেট্রিক টন বরাদ্দ রয়েছে।
  • মিলারদের হিসাব অনুযায়ী, সদর উপজেলায় কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা হিসাবে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আর অন্য পাঁচ উপজেলায় কেজিপ্রতি ৬০ পয়সা হিসাবে ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা, আর অন্য পাঁচ উপজেলায় ৬০ পয়সা উৎকোচ নির্ধারণ করে পয়সা আদায় করছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। এই পয়সা না দিয়ে সরকারি গুদামে কোনো মিলমালিক চাল বিক্রি করতে পারছেন না।

চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় ওই পয়সা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। না দিলে বরাদ্দপত্র পাচ্ছে না। এভাবে মিলগুলোর মালিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। মিলমালিকেরা অভিযোগ করেন, কেজিপ্রতি হিসাব কষে টাকা নেওয়ায় এবার তাঁদের চাল বিক্রিতে মোটা টাকা গুনতে হচ্ছে। কোনো কোনো মিলারকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকাও দিতে হচ্ছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরকে এই টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মিলমালিকেরা।

হিসাব অনুযায়ী, জেলার ছয় উপজেলায় এ বছর ১৫ হাজার ৯২৭ মেট্রিক টন চাল ক্রয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে জেলার ৪৩০ জন মিলমালিকের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর জেলার বাকি পাঁচ উপজেলায় ৭ হাজার ৪২৭ মেট্রিক টন বরাদ্দ রয়েছে। এতে মিলারদের হিসাব অনুযায়ী সদর উপজেলায় কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা হিসাবে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আর অন্য পাঁচ উপজেলায় কেজিপ্রতি ৬০ পয়সা হিসাবে ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। মোটা অঙ্কের এই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর।

জেলার শৈলকুপা উপজেলার দেশ অটোর মালিক টিপু সুলতান জানান, তিনি ৬৫০ মেট্রিক টন চাল বিক্রির বরাদ্দ পেয়েছেন। এই বিক্রির বরাদ্দপত্র পেতে তাঁকে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়েছে। চুক্তির সময় এই টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। টাকা না দিলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেন না বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সদর উপজেলার বিশ্বাস রাইস মিল ও আলতাফ রাইস মিলের মালিক আলতাফ হোসেন জানান, তিনি দুই মিল থেকে ৩ মেট্রিক টন চাল বিক্রির বরাদ্দ পেয়েছেন। এই বরাদ্দপত্র নিতে তাঁকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। বন্ধন মেজর রাইস মিলের মালিক ঝিনাইদহের হাটগোপালপুরের বিকাল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, নানা খরচের কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে অতিরিক্ত পয়সা নেওয়া হচ্ছে। গোটা বছর চাল তৈরি করে মিলাররা অপেক্ষা করেন সরকারি গুদামে চাল বিক্রি করবেন। এতে তাঁরা কিছুটা হলেও লাভ পাবেন। কিন্তু লাভের বিষয়টি সামনে এলেই নানা ধরনের উৎকোচ বেড়ে যায়। অন্য বছরের তুলনায় এবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের কর্মকর্তারা তাঁদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন।

জোহান ট্রেডার্সের মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, শুধু চাল বিক্রিতে নয়, এবার মিলারদের লাইসেন্স নবায়নে অতিরিক্ত পয়সা দিতে হচ্ছে। প্রতিটি লাইসেন্সে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এভাবে পাঁচ শতাধিক মিলমালিকের কাছ থেকে আরও কয়েক লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ছোট ছোট অনেক মিলমালিক রয়েছেন, তাঁরা এই টাকা দিতেও কষ্ট পাচ্ছেন। তারপরও মিল চালু রাখতে তাঁরা এই বাড়তি টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

জেলার তেঁতুলতলা বাজারের ভাই ভাই রাইস মিলের মালিক মো. সমশের আলী জানান, তাঁর কাছ থেকেও লাইসেন্স নবায়নে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে। তিনি এই টাকা না দিতে চাইলে লাইসেন্স নবায়ন হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাকিব সাদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, তাঁর দপ্তর থেকে কেজিপ্রতি এই টাকা নেওয়ার অভিযোগ মোটেও ঠিক নয়। এটা তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মিথ্যা প্রচার করছেন। এ ছাড়া লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। এখানে ব্যাংকের কিছু খরচ আছে। খরচের অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে, এটাও সম্পূর্ণ মিথ্যা।