জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়েছিলেন ইসহাক
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে সেখানে শিশুদের মধ্যে জঙ্গিবাদের উগ্রতা ছড়িয়ে দিতেন তিনি। জঙ্গিবাদে রোহিঙ্গাদের উদ্বুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও। নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের বই প্রকাশ করতেন নিয়মিত। জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দিতে ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক ব্যবহার করতেন। নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের গণমাধ্যমের অন্যতম সমন্বয়কও তিনি। এসব কাজে যিনি জড়িত, তিনি হলেন মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক খান (৩২)। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার র্যাব-৩ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
আজ বুধবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ইসহাকের জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার এসব কথা জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. এমরানুল হাসান। তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁরা জানতে পারেন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থানার ইরতা কাশিমপুর গ্রামে আনসার আল ইসলামের কিছু সদস্য যুবকদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার জন্য উগ্রবাদী কিছু বই প্রচার করে আসছে। খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার ইসহাক খানকে বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বইসহ আটক করা হয়। তাঁর বাবার নাম আবদুর রহমান খান।
এমরানুল হাসান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইসহাক খান নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের গণমাধ্যম শাখার অন্যতম সমন্বয়ক। ইউটিউব চ্যানেলে ও ফেসবুকে জঙ্গিবাদের উগ্রতা ছড়িয়ে দিতে ভিডিও ও পোস্ট দিতেন। এ ছাড়া উগ্রবাদী লেখার মাধ্যমে যুবকদের উদ্বুদ্ধ করে কর্মী সংগ্রহ ও প্রচার করেন। লাইট হাউস ডট কম নামের ব্লগে তিনি উগ্রবাদী মতবাদ প্রচার করেন।
ইসহাক খান ২০০৬ সালে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস পাস করেন। এ সময় তাঁর শিক্ষক আনসার আল ইসলামের আধ্যাত্মিক নেতা জসীমুদ্দীন রাহমানীর সংস্পর্শে আসেন। পরবর্তী সময়ে জসীমউদ্দীন রাহমানীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে উগ্রবাদী প্রচারণা ও দাওয়াতে অংশ নিতে থাকেন। ইসহাক এ সময় খান প্রকাশনী নামে একটি নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে জসীমুদ্দীন রাহমানীর বিভিন্ন উগ্রবাদী বক্তব্য ও মতাদর্শ বই আকারে প্রকাশ করে আসছেন। পরবর্তীকালে ২০১৩ সালে জসীমুদ্দীন রাহমানী গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইসহাক খান আত্মগোপনে চলে যান। এ সময় বেনামি প্রকাশনার মাধ্যমে জসীমুদ্দীন রাহমানী ও আনওয়ার আল আওলাকীসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিতর্কিত ধর্মীয় নেতার উগ্রবাদী বই সংকলন করে প্রকাশ করতে থাকেন। তাঁর ভাই মো. আশরাফ আলী খান আনসার আল ইসলামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তাঁর আরেক ভাই রাকিব নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহ্রীর সক্রিয় সদস্য এবং বর্তমান জেলে আছেন। ইসহাক খান প্রকাশনী ও মাকবুল প্রকাশনীর নামে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী বই প্রকাশ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় সরবরাহ করেন। বাংলাবাজারের ইসলামি টাওয়ারে তার প্রকাশনীর অফিস আছে। তিনি গাজওয়াতুল হিন্দ-এ বিশ্বাস করেন। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে মারকাজুল কোরআন ওয়াল হিকমাহ নামে তিনি একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ওই মাদ্রাসার ছোট শিশু-কিশোরদের মধ্যে উগ্রবাদ প্রচার করতেন তিনি। এ ছাড়া আনসার আল ইসলামের সদস্যদের নিয়মিত বৈঠক তাঁর বাসায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
ইসহাকের অর্থের উৎস কী, জানতে চাইলে এমরানুল হাসান বলেন, ‘আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছি। আরও জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানার চেষ্টা করব।’