জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বহিরাগত ব্যক্তিকে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মীর বিরুদ্ধে। আজ শনিবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় মারধর ও ছিনতাইয়ের শিকার মনির হোসেনকে (৩০) আহত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঘটনার বিচার চেয়ে মনির হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কার্যালয় ও প্রক্টর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইয়ের সময় ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী হাতেনাতে ধরেছেন। বাকি দুজন পালিয়ে যান।
আটক ছাত্রলীগের কর্মীরা হলেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের হলের আবাসিক ছাত্র সঞ্জয় ঘোষ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আল রাজী, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও শহীদ রফিক জব্বার হলের রায়হান পাটোয়ারি। সঞ্জয় ঘোষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বাকি দুজন ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁরা তিনজন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানার অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
পলাতক দুজন হলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র শাহ মুসতাক সৈকত এবং দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র মোকাররম শিবলু। তাঁরা দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের ছাত্র ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ানের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
প্রক্টর কার্যালয় সূত্র অনুযায়ী, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর রায়হান পাটোয়ারিকে ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাঁর বিরুদ্ধে ওই বছরের ২২ জুন ক্যাম্পাসে দুজন দর্শনার্থীর কাছ থেকে মোবাইল-মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিল।
ভুক্তভোগীর আত্মীয়-স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কয়েক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্বশুরের কোয়ার্টারে বেড়াতে আসেন মনির হোসেন। আজ শনিবার ভোরে তিনি তাঁর কর্মস্থলে যোগদানের জন্য বিশমাইল এলাকায় সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁকে আটক করে মুঠোফোন, মানিব্যাগসহ নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেন। একপর্যায়ে মনির হোসেন পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে ধরে ইজিবাইকে করে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে নিয়ে যান অভিযুক্তরা। সেখানে তাঁরা মনির হোসেনকে বেধড়ক মারধর করেন। পরে তাঁরা মনিরের স্ত্রীর কাছে মুঠোফোনে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী ঘটনাস্থলে যান। এ সময় লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা পালানোর চেষ্টা করেন। কর্মচারীরা তাঁদের মধ্যে তিনজনকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘বিষয়টা আমি শুনেছি। অভিযুক্তদের কেউ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসনেরও দায়িত্ব আছে। সঞ্জয়কে ছাড়া বাকিদের চিনি না।’
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কর্মীরা যদি যুক্ত থাকে তাহলে অবশ্যই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে আটক তিনজনের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’