চুরি না প্রেম, কী কারণে কলেজছাত্রকে এমন নির্যাতন
হবিগঞ্জের বাহুবলে ‘চোর’ দাবি করে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বৃন্দাবন সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ফয়সাল মিয়াকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ বলছে, তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে তরুণীর স্বজনের এমনটা করেছেন। পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় ছেলেটিকে উদ্ধার করে তাঁর পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।
যে বাড়িতে ফয়সালকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে সেই বাড়ির লোকজনের দাবি, ছেলেটি অস্ত্র হাতে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে বাড়ির এক মেয়ের নাম ধরে ডাকাডাকি করছিলেন। তিনি তাঁদের ঘরে ঢোকার চেষ্টা করলে তাঁরা তাঁকে আটক করে পুলিশে দেন।
ফয়সাল বর্তমানে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে নির্যাতন করার ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ফয়সালের বাড়ি জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। বাহুবল উপজেলার এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শনিবার রাতে ওই তরুণী মুঠোফোনে ফয়সালকে ডেকে তাঁদের বাড়িতে নেন। এরপর তাঁর আত্মীয়স্বজন ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফয়সালকে নির্যাতন করেন।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ফয়সালকে খুব মারধর করা হচ্ছে। এ সময় তিনি বাঁচার জন্য আকুতি-মিনতি করছেন।
ফয়সালের পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবে ফয়সালকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে বাহুবল থানায় খবর দিয়ে জানানো হয় যে তাঁরা চোর ধরেছেন। বাহুবল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফুয়াদ ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, এটা চুরির নয়; প্রেমসংক্রান্ত ঘটনা। পরে পুলিশ ফয়সালের পরিবারকে খবর দিয়ে তাঁকে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করে। স্বজনেরা তাঁকে প্রথমে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রোববার তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এ ব্যাপারে ফয়সালের বাবা আহসান উল্ল্যার ভাষ্য, তাঁর ছেলেকে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ছেলের শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন আছে। ছেলে এখন পরিবারের কাউকে চিনতে পারছে না বলে তিনি দাবি করেন।
তরুণীর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির দাবি, ওই তরুণীর সঙ্গে ফয়সালের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু মেয়ের পরিবার তা মেনে নিচ্ছে না। সে কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটির পরিবারের দাবি, ছেলেটি তাদের ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ কারণে তারা তাঁকে আটক করে। অপর দিকে ছেলেটির দাবি, তাঁকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। কোনটি সত্য, তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। পাশাপাশি এখনো দুটি পক্ষের কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। তবে পুলিশের ধারণা, এটি প্রেমসংক্রান্ত ঘটনা।