খিলক্ষেতে খোকন হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ
রাজধানীর খিলক্ষেতে খোকন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চার আসামিকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এই আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক প্রবীর কুমার ঘোষ রোববার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, খোকন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার চার আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আসামিদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। চার আসামি হলেন সোহেল সরদার (২৬), মাসুম (৩০), রুবেল মিয়া (৩০) ও রাজু (৩০)।
গত বছরের ১১ জুন কালীগঞ্জের আড়িখোলা স্টেশনের আউটার সিগনালে অজ্ঞাত এক পুরুষের লাশ পাওয়া যায়। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে ভৈরব রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। অজ্ঞাত ওই যুবকের লাশ নরসিংদী রেলওয়ে ফাঁড়ির সামনে দাফন করা হয়। পরে খোকনের পরিবার রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। খোকনের ছবি দেখান। খোকনের পরিবার নিশ্চিত হন, রেলস্টেশনে যে লাশ পাওয়া গিয়েছিল তিনিই হলেন খোকন। এ ঘটনায় খোকনের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন বাদী হয়ে ঢাকার আদালতে ছয়জনের নামে গত বছরের ১৬ জুলাই খুনের মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।
খোকনের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন মামলায় বলেন, তাঁর স্বামী খোকন পিকআপ ভ্যান চালক। তাঁদের এক সন্তান থাকেন। বয়স ১১ বছর। থাকেন খিলক্ষেত এলাকায়। যে ছয়জন আসামি খুনের সঙ্গে জড়িত, সবাই খোকনের বন্ধু। গত বছর রোজার সময় আসামি আদিল হোসেন দশ হাজার টাকা ধার করেন খোকনের কাছ। শর্ত ছিল ১৫ রোজার মধ্যে টাকা ফেরত দিতে হবে। টাকা না দেওয়ায় খোকনের সঙ্গে আসামি আদিলের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। হাতাহাতিও হয়। চাঁদ রাতের আগেই ধার নেওয়া টাকা ফেরত দেবে বলে অঙ্গীকার করেন আদিল। গত বছরের ৮ জুন বিকেলে খোকনকে ডেকে নিয়ে যান বন্ধু (আসামি) রাসেল। সেই যে বাসা থেকে খোকন বেরিয়ে যায় আর তিনি বাসায় ফেরেননি। পরে সেদিনই খোকনের পরিবার খিলক্ষেত থানায় যোগাযোগ করে। পরে হাসপাতালসহ নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরও আর খোকনের হদিস পাওয়া যায় না। তবে নিখোঁজ হওয়ার বারো দিন পর খিলক্ষেতের পিকআপ স্ট্যান্ডে যান খোকনের বাবা। সেখানে দেখা হয় বন্ধু রাসেলের (আসামি) সঙ্গে। রাসেল তখন জানায়, ঘটনার দিন তাঁরা একসঙ্গে ছিল। তবে রাত ৯টার পর পিকআপ স্ট্যান্ড থেকে খোকনের পরিচিত আদিল, হেলাল, সোহেল, মাসুম এবং শামসু (রাসেলসহ ছয়জনই এখন এই খুনের মামলার আসামি) ডেকে নিয়ে যায়।
মামলায় আরও বলা হয়, আসামি রাসেল সেদিন জানায়, খোকন ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। রাসেলের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে খোকনের পরিবার আড়িখোলা রেলস্টেশনে যায়। সঙ্গে যান ছয় বন্ধুও (যারা এখন আসামি)। রেলস্টেশনের কর্মকর্তাদের খোকনের ছবি দেখানো হলে লাশের পরিচয় মেলে। আসামিরা তখন জানায়, খোকনের মৃত্যু একটা দুর্ঘটনা। একসঙ্গে তাঁরা মাইক্রোবাসে করে খিলক্ষেতে ফিরে আসে। খোকনের বন্ধুদের কথা সন্দেহজনক হওয়ায় বিষয়টি খিলক্ষেত থানাকে জানায় খোকনের পরিবার।
মামলায় দাবি করা হয়, খোকনকে খিলক্ষেতে খুন করে লাশ কালীগঞ্জের আড়িখোলা স্টেশনে ফেলে আসে ছয় আসামি। অপমৃত্যুর মামলার তথ্য মতে, লাশের হাত-পা ছিল স্বাভাবিক। কেবলমাত্র মাথার পেছনে দুই ইঞ্চি মতো গর্ত ছিল। আসামিরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকলে খোকন যে ট্রেন কাটা পড়ে মারা গেছে তা তাঁদের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না।
আদালত সূত্র বলছে, খোকন খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে খিলক্ষেত থানা-পুলিশ রাসেল, আদিল ও হেলালকে (খোকনের বন্ধু ছিল) গত বছরের ৭ আগস্ট গ্রেপ্তার করে। পরে মামলার তদন্তভার পায় সিআইডি। এই তিন আসামিকে আবার রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সিআইডি গত বছরের ৯ অক্টোবর প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানায়, আসামিরা খোকনকে কৌশলে অপহরণ করে হত্যা করে। রাসেল, আদিল ও হেলাল গ্রেপ্তার হলেও পলাতক আছেন মামলার অপর তিন আসামি সোহেল, মাসুম ও শামসু।
গত ৫ এপ্রিল সিআইডি আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে, আসামি মাসুম, সোহেল, রুবেল ও রাজু খিলক্ষেত এলাকায় বসবাস করতেন। আসামিরা সবাই নিহত খোকনের পরিচিত। একই সঙ্গে তাঁরা চলাফেরা করতেন। ঘটনার দিন ভোর রাতে রুবেল ও রাজুসহ বাকি ছয় আসামি একসঙ্গে ছিল। আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে অন্য সহযোগীদের নিয়ে খোকনকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।
তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক প্রবীর কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, খোকন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের সব ধরনের চেষ্টাই চলছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।