রাজধানীর কলাবাগানে মারা যাওয়া ইংরেজি মাধ্যমের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রীর (১৭) দাফন কুষ্টিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সদর উপজেলায় মেয়েটির গ্রামের বাড়িতে দাফন হয়। দাফন শেষে স্থানীয় এলাকাবাসী দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন।
এর আগে ঢাকা থেকে গতকাল শুক্রবার রাত দুইটার দিকে মেয়েটির লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। মেয়েটির মা বলেন, ফোন পেয়ে তিনি দ্রুত কর্মস্থল থেকে হাসপাতালে যান। তাঁর অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাঁকে দেড় ঘণ্টা মেয়েকে দেখতে দেয়নি। মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনায় ধর্ষণের পর হত্যা মামলার অভিযুক্ত তানভীর ইফতেখার দিহান (১৮) সম্পর্কে তাঁর ভাষ্য, এই ছেলেকে আগে কখনো তিনি দেখেননি। মেয়েও তাঁকে কোনো দিন কিছু বলেনি। মায়ের অভিযোগ, সে (তানভীর) কখনোই তাঁর মেয়ের বন্ধু হতে পারে না। হয়তো ফেসবুকে যোগাযোগ করে কৌশলে মেয়েকে বাসায় নিয়ে গেছে। পরিকল্পিতভাবে তাঁর মেয়েকে নিয়ে হত্যা করেছে বলে তাঁর অভিযোগ।
মেয়েটির বাবার অভিযোগ, থানা–পুলিশকে তিনি তানভীর ইফতেখার দিহান ও তাঁর তিন বন্ধুকে আসামি করতে বলেছিলেন। কিন্তু মামলা দুর্বল হয়ে যাবে—এমন কথা বলে পুলিশ একজনকে আসামি করে। পুলিশ কেন এমন করল, তা বুঝতে পারছেন না তিনি। তিনি আফসোস করে বলেন, ঘটনার দিন মেয়ের ফোন থেকে দুপুর ১২টা ১৯ মিনিটের দিকে কল এসেছিল। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি কল ধরতে পারেননি। বেলা দেড়টার পর তাঁর স্ত্রী কলে জানান, মেয়ে মারা গেছে। হাসপাতালে লাশ পড়ে আছে।
মেয়েটির বাবা–মা দুজনের অভিযোগ, মেয়ের বয়স নিয়ে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিড়ম্বনায় ফেলেছে। তাঁদের মেয়ে ২০০৩ সালে জন্মগ্রহণ করেছে। পাসপোর্ট ও জন্মসনদ অনুযায়ী মেয়ের বয়স ১৭ বছর। মামলা দুর্বল করতে বয়স ১৯ লেখা হয়েছে।
এদিকে আজ সকাল সাড়ে সাতটায় লাশ দাফন শেষে স্থানীয় বাজারে এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে শতাধিক মানুষ অংশ নেন। সেখানে বক্তারা বলেন, দ্রুত দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
নিউমার্কেট অঞ্চলের পুলিশ বলেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক তরুণ এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন। কিশোরীর শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তখন নিউমার্কেট অঞ্চল পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান ওই তরুণকে আটকে রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। এরই মধ্যে কলাবাগান থানার পুলিশ আনোয়ার খান হাসপাতালে গিয়ে ওই তরুণকে আটক করে।
অভিযুক্ত তরুণের বাবা সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার। ছাত্রীটির বাবা ব্যবসায়ী। তাদের বাসা রাজধানীর সোবহানবাগে।