স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে তিরস্কার করেছে। কমিটি বলেছে, লাইসেন্স ও ওষুধ তৈরির অনুমোদন বাতিল করতে বলা দুটি ওষুধ কোম্পানির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
গতকাল রোববার সংসদ ভবনে সংসদীয় কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বলা হয়, টেকনো ড্রাগ ও বেনহাম ফার্মা নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ নিয়েছে অধিদপ্তর।
সংসদীয় কমিটির বিশেষজ্ঞ দল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও মানসম্পন্ন ওষুধ প্রস্তুতে সক্ষমতা না থাকায় ২০টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেয়। সংসদীয় কমিটি তাদের গত বৈঠকে প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টেকনো ড্রাগ রয়েছে।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস) নীতিমালা অনুযায়ী ২২টি প্রতিষ্ঠান পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনে সক্ষম নয়। কমিটি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া এই গ্রুপের ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিলের সুপারিশ করে। এর মধ্যে বেনহাম ফার্মা রয়েছে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বেনহাম ফার্মাকে নতুন করে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রস্তুতে অনুমতি দিয়েছে। এ ছাড়া টেকনো ড্রাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ পাঠিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
বৈঠক সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে মোস্তাফিজুর রহমান বেনহাম ফার্মাকে দেওয়া অনুমতিপত্র সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। এ সময় কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে দেওয়া অনুমতিপত্র উপস্থাপন করেন। তিনি মহাপরিচালককে উদ্দেশ করে বলেন, একজন মহাপরিচালক কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবাদ পাঠাতে পারেন?
জানতে চাইলে কমিটির সদস্য আ ফ ম রুহুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে আইন আছে, আইনের প্রয়োগ নেই। সে জন্যই এসব অনিয়ম হচ্ছে। আর আইন যেটুকু প্রয়োগ হয়, তার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসছে। এ কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু করা যায় না।’ তিনি আরও বলেন, জনবলের অভাবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ভেজাল ওষুধ তৈরি করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
একই বিষয়ে জানতে মোস্তাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, যাচাই-বাছাই করে সঠিক মানের ওষুধ তৈরি করা ৪০টি প্রতিষ্ঠান রেখে বাকিগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা যায় কি না, সে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
বৈঠকে ২০টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দ্রুত বাতিলের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। মন্ত্রণালয় বলেছে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। ইতিমধ্যে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো এই বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করে স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠান হলো এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মা, স্পার্ক ফার্মা, স্টার ফার্মা ও ট্রপিক্যাল ফার্মা।
বৈঠকে আরও অংশ নেন কমিটির সদস্য স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ইউনুস আলী সরকার, সেলিনা বেগম প্রমুখ।