এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণে নাম এল যাদের

প্রথম সারিতে বাঁ থেকে সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম ও শাহ মাহবুবুর রহমান দ্বিতীয় সারিতে বাঁ থেকে অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান
সংগৃহীত

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় নয়জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা ‘ছাত্রলীগের কর্মী’ হিসেবে পরিচিত।  
নাম উল্লেখ করা ছয় আসামি হলেন সাইফুর রহমান (২৮), তারেকুল ইসলাম (২৮), শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি (২৫), অর্জুন লঙ্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুম (২৫)। তাদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত। বাকিরা এমসি কলেজের সাবেক ছাত্র। নাম উল্লেখ করা ছয়জনের সঙ্গে তিনজন সহযোগী ছিলেন উল্লেখ করে তাদের অজ্ঞাত বলা হয়েছে।

শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ূম চৌধুরী ছয়জনের নাম উল্লেখসহ নয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের শিকার তরুণীর (২০) স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন।
মামলার এজাহারে সাইফুর রহমানের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে ও বর্তমান ঠিকানা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাংলো উল্লেখ করা। শাহ মাহবুবুর রহমানের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনিপাড়া ও বর্তমান ঠিকানা ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের ২০৫ নম্বর কক্ষ, মাহফুজুর রহমানের বাড়ি কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় জগদল গ্রামে, অর্জুনের বাড়ি জকিগঞ্জের আটগ্রাম এবং তারেকের বাড়ি সুনামগঞ্জ শহরের নিসর্গ আবাসিক এলাকায় (হাসননগর)।

আরও পড়ুন

কলেজ সূত্র জানায়, সাইফুর, রনি ও মাহফুজুর ইংরেজি বিভাগের স্নাতক শ্রেণির অনিয়মিত শিক্ষার্থী। অর্জুন সাবেক শিক্ষার্থী। রবিউল বহিরাগত। ছয়জনই ছাত্রলীগের কর্মী ও টিলাগড়কেন্দ্রিক একটি পক্ষে সক্রিয়।
এর মধ্যে প্রধান আসামি সাইফুর রহমানের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের সঙ্গে ছবি আছে। ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ধর্ষণ মামলার আসামি সবাই রণজিৎ সরকারের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী। এ ব্যাপারে রণজিৎ সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

অবশ্য আসামি ছয়জনের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোহা. সোহেল রেজা প্রথম আলোকে বলেন, আপাতত অপরাধী পরিচয়ে তাদের ধরার তৎপরতা চলছে।

আরও পড়ুন

১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এমসি কলেজ বাংলাদেশর অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নগরের টিলাগড় এলাকায় ৬০০ শতক জায়গার ওপর ১৯২০ সালে ব্রিটিশ আমলে আসাম ঘরানার স্থাপত্যরীতির ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়েছিল। ২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের জের ধরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছিল ছাত্রাবাসের ৪২টি কক্ষ। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর পুনর্নির্মিত ছাত্রাবাস উদ্বোধন করা হয়। এর পর থেকে ছাত্রলীগই এককভাবে ছাত্রাবাসে আবাসিক ছাত্রদের বসবাস নিয়ন্ত্রণ করছে। যদিও এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। সিলেটে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিও কেন্দ্র থেকে স্থগিত রয়েছে।

ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের কক্ষের সামনে ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমসি কলেজ ও সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের দুজন সাবেক নেতা বলেন, ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটেছিল, সেই ঘটনার পর থেকে ৭ নম্বর ব্লকের কক্ষটি 'ছাত্রলীগের' হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ছাত্রাবাস খোলার পর থেকে ওই কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগের একাধিক পক্ষের সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ছাত্রলীগের দুই পক্ষে আধিপত্য বিস্তারে ছাত্রাবাসে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। তখন প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ রাখার পর ওই বছরের ২৯ জুলাই ছাত্রাবাস খোলা হয়। গত বছরের ৬ আগস্ট রাতে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের কয়েকটি কক্ষ ও নতুন ভবন দখল তৎপরতার মুখে সর্বশেষ ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে বন্ধ ছিল ছাত্রাবাস।

আরও পড়ুন

যে কক্ষের সামনে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি ছাত্রলীগের দখল করা কক্ষ কিনা—জানতে চাইলে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে ছাত্রাবাস বন্ধ। শুনেছি নেতারা (ছাত্রলীগ নেতা) সেখানে ছিল। এর বাইরে আর কিছু আমি জানি না। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে পুলিশ ও র‌্যাবকে বলেছি।’