আবরার ফাহাদের লাশ দ্রুত সরাতে চাপ দিচ্ছিল রাসেল ও অন্যরা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান আদালতকে বলেছেন, রাত সোয়া তিনটার দিকে আবরার ফাহাদ হত্যার কথা জানার পর তিনি শেরে বাংলা হলে যান। সেখানে বুয়েটের চিকিৎসক মাসুম এলাহী তাঁকে জানান, আবরার অনেক আগেই মারা গেছেন। মিজানুর রহমান বলেন, তিনি শেরে বাংলা হলের বারান্দায় রাসেলসহ (ওই হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ও মামলার আসামি) কয়েকজন ছাত্রকে দেখেন। এরা আবরারের লাশ দ্রুত সরিয়ে ফেলার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছিল।
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আজ বুধবার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান এ কথা বলেন। আগামী ২ নভেম্বর মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করেছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান। এই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলায় ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
আদালতে মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের ৭ অক্টোবর তিনি বুয়েট ছাত্র কল্যাণের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেদিন রাত ৩ টা ১০ মিনিটের দিকে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের প্রভোস্ট জাফর ইকবাল খান ও সহকারী প্রভোস্ট ইফতেখার আহমেদ তার বুয়েটের বাসায় আসেন। তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলেন, যে শেরেবাংলা হলের একজন ছাত্র খুন হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাদের নিয়ে শেরেবাংলা হলে চলে যান। হলের নিচতলায় গিয়ে স্ট্রেচারে শোয়ানো অবস্থায় আবরারের মৃত দেহ দেখতে পান। বুয়েটের চিকিৎসক মাসুম এলাহী আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, অনেক আগেই আবরার ফাহাদ মারা গেছেন।
তখন শেরেবাংলা হলের বারান্দায় রাসেলসহ কয়েকজন ছাত্র উপস্থিত ছিলেন। রাসেলসহ অন্য ছাত্ররা আবরারের লাশ দ্রুত সরিয়ে ফেলার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছিলেন।’
মিজানুর বলেন, রাতে সাড়ে তিনটার দিকে তিনি বুয়েটের উপাচার্যকে ফোন করেন। উপাচার্য পুলিশকে ফোন করতে বলেন। তার মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে রাত চারটার দিকে চকবাজার থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন হলে আসেন। ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বলেন, ‘এসআই দেলোয়ার আবরারের লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করেন। আমরাও তখন তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। আঘাতের চিহ্ন গুলো ছিল কাঁধ থেকে হাতের কবজি পর্যন্ত এবং কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত। দুই হাঁটুতে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। এ সময় পুলিশ জখমের ছবি তোলে।
গত বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ২১ জানুয়ারি অভিযোগপত্রটি আমলে নেন আদালত। তিন আসামি পলাতক রয়েছেন।