ঈদের ছুটিতে ঢাকায় থাকবে ১৫ হাজার পুলিশের কড়া নিরাপত্তা

নিরাপত্তা জোরদারে থাকছেন র‌্যাব, এপিবিএন, সিটিটিসি, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরাও।

ঢাকায় ঈদের আগে ও পরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ডিএমপিছবি: ডিএমপি

পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটিতে রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন–র‍্যাব। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ সময় মহানগরে অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ তৎপর থাকবে। রাস্তায় তল্লাশিচৌকি বসানোর পাশাপাশি বিপণিবিতান ও আবাসিক এলাকায় টহল জোরদার করা হবে।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার ইতিমধ্যে ২৮ মার্চ থেকে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। এ সময় স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে যাবেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ঈদ ঘিরে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। এতে বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিস ফাঁকা হয়ে যাবে। ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে নগরবাসী। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি—এই ভয়ের অন্যতম কারণ। এসব বিষয় মাথায় রেখে ঈদের আগে ও পরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ডিএমপি।

নগরবাসীকে উদ্দেশ করে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, আমাদের ব্যবস্থাপনাটা আমরা করব।’

ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঈদে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে রাতের বেলায় বাড়ানো হবে পুলিশি টহল। নিরাপত্তা জোরদার করা হবে বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে। পুরান ঢাকা ছাড়াও মহানগরের বিভিন্ন এলাকার সোনার মার্কেটে থাকবে পুলিশের কড়া নজরদারি। বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, আড়তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, বিপণিবিতান, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ছিনতাইকারী, ডাকাত, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যদের ধরতে পুলিশ ও র‌্যাবের বিশেষ টিম সক্রিয় রয়েছে।

ডিএমপি কর্মকর্তারা বলেন, আগের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঈদের ছুটির দিনগুলোতে সোনার দোকানে চুরি-ডাকাতি হয়। নিরাপত্তাকর্মীক বেঁধে রেখে আবার নিরাপত্তাকর্মীদের যোগসাজশে সোনার দোকানে ডাকাতি হয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, নতুন নিয়োগ পাওয়া ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ (সহায়ক বাহিনী) এবার বিপণিবিতানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। ঈদের সময় ঢাকার রাস্তায় মানুষের চলাচল কমে যাবে। তখন আবাসিক এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হবে। রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ঈদের সময় রাজধানীতে দিনে–রাতে ৬০০টি পুলিশ দল টহল দেবে। এ ছাড়া প্রতিদিন মহানগরের ৭৫টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করা হবে।

থানা-পুলিশের বাইরে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) পুলিশ দল, পুলিশের বিশেষায়িত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি), গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মিলিয়ে মোট ১৫ হাজার পুলিশ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করবে বলে জানান নজরুল ইসলাম।

ঈদের ৯ দিনের ছুটিতে রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার কাজ করবে র‌্যাবও। এই বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীতে বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলস্টেশনে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি করবে। যেসব জায়গায় ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা নেই, সেসব স্থানে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে র‍্যাব সদস্যরা টহল দেবেন।