ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদন
সরকারি ওয়েবসাইট ব্যবহার করে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন
অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন
১১টি সরকারি ওয়েসবাইটের সঙ্গে যুক্ত ৩ হাজার ২৯৫টি পেজে জুয়ার প্রচার।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৪৯৩টি জুয়ার পেজ।
বাংলাদেশ সরকারের অন্তত ১১টি ওয়েবসাইটের ডোমেইন ব্যবহার করে অনলাইন জুয়ার প্রচার চালানো হচ্ছে। এসব ওয়েবসাইটের সঙ্গে যুক্ত এমন তিন হাজারের বেশি পেজের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব পেজ থেকে গ্রাহকদের চারটি অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট বা অ্যাপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাবের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ‘হাজারো জুয়ার পেজে ভরা বাংলাদেশের সরকারি ওয়েবসাইট’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গতকাল সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইট ব্যবহার করে কীভাবে অনলাইন জুয়ার প্রচার চালানো হচ্ছে, এসব সাইট থেকে ব্যবহারকারীদের কীভাবে জুয়ার সাইটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে।
ডোমেইনের মাধ্যমে ইন্টারনেটজগতে ওয়েবসাইটের পরিচয় নির্ধারিত হয়। ‘জিওভি ডট বিডি’ ডোমেইনটি বাংলাদেশের সরকারি সংস্থাগুলোর জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটগুলোর ডোমেইন। ডিসমিসল্যাবের পক্ষ থেকে ‘জিওভি ডট বিডি’ ডোমেইনের সঙ্গে ‘ক্যাসিনো’ ও ‘বেটিং’-এর মতো শব্দগুলো ব্যবহার করে গুগলে অনুসন্ধান করা হয়। এতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থার সরকারি ওয়েবসাইটে জুয়ার ৩ হাজার ২৯৫টি ওয়েব পেজ পাওয়া গেছে।
অনলাইন জুয়ার তিন হাজারের বেশি পেজ রয়েছে। এগুলোতে চারটি অনলাইন জুয়ার অ্যাপের প্রচার চালানো হচ্ছে।
যেসব সরকারি ওয়েবসাইটের ডোমেইন ব্যবহার করে জুয়ার প্রচার চালানো হচ্ছে, এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), স্থানীয় সরকার বিভাগ, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড, নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ, কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ। সরকারনিবন্ধিত দুটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের ডোমেইন ব্যবহার করেও অনলাইন জুয়ার প্রচার চালাতে দেখা গেছে।
গবেষণার এই ফলাফল সরকারি ওয়েবসাইট পরিচালনার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ডিসমিসল্যাবের পক্ষ থেকে গত ৩০ মে এ বিষয়ে দেশে সাইবার নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্বে থাকা কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমকে (বিজিডি ই-গভ সার্ট) জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিডি ই-গভ সার্ট প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিসমিসল্যাব থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আমরা তাদের জানিয়েছি, জুয়ার মতো আর্থিক সংশ্লেষ থাকা বিষয়গুলো বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে দেখা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকেও তারা জানাতে পারে।’
আর বিটিআরসির সচিব ও মুখপাত্র নুরুল হাফিজ বলেন, কোন ওয়েবসাইটে এমন হয়েছে বলতে পারছেন না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে কী কী বিষয় উঠে এসেছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড, নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ, কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ। সরকারনিবন্ধিত দুটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের ডোমেইন ব্যবহার করেও অনলাইন জুয়ার প্রচার চালাতে দেখা গেছে।
যেভাবে চলছে জুয়ার বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে সব ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ হলেও অনলাইন জুয়ার সাইটগুলোকে বেশি মানুষের কাছে নিয়ে যেতে নানা কৌশলে প্রচার চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। টেলিভিশন চ্যানেল, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও ঢাকার বিলবোর্ডে প্রচারের মাধ্যমে এগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এর সঙ্গে সরকারি ওয়েবসাইট ব্যবহার করেও এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য শিল্প, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রপ্তানির প্রসার ও বহুমুখীকরণে কাজ করে বেজা। সংস্থাটির ওয়েবসাইটটি অনলাইন জুয়ার প্রচারের প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। এই ওয়েবসাইটের প্রধান ডোমেইন এবং সাতটি সাবডোমেইনে ১ হাজার ৪৯৩টি অনলাইন জুয়ার ওয়েব পেজ পেয়েছে ডিসমিসল্যাব। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই জুয়ার ওয়েব পেজগুলো বেজার ওয়েবসাইটের ভেতরে ৩২টি সাবডোমেইনের মধ্যে লুকানো আছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি গুগলে কিছু বিশেষ শব্দ (কিওয়ার্ড) অনুসন্ধানের মাধ্যমে পাওয়া যায়। ডিসমিসল্যাব পরীক্ষা করে দেখেছে, মূল ওয়েবসাইট ছাড়াও সাতটি সাবডোমেইন জুয়ার প্রচারকারীদের হাতে চলে গেছে। এসব পেজে ক্লিক করলে তারা ব্যবহারকারীকে জুয়ার কোনো একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যায়।
ডিসমিসল্যাব থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আমরা তাদের জানিয়েছি, জুয়ার মতো আর্থিক সংশ্লেষ থাকা বিষয়গুলো বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে দেখা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকেও তারা জানাতে পারে।বিজিডি ই-গভ সার্ট প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান
বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ওয়েবসাইটও এই অনলাইন জুয়ার কারবারিদের কবলে পড়েছে। ডিসমিসল্যাবের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের ওয়েবসাইটে ৩৫৮টি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের ওয়েবসাইটে ৩৫২টি, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাইটে ২৮৮টি, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরে ওয়েবসাইটে ২৮১টি, ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমির (ফিমা) ওয়েবসাইটে ১৬৭টি ও ফেনী জেলা পরিষদের সাইটের সঙ্গে যুক্ত ১৪৯টি জুয়ার পেজ রয়েছে।
যাঁরা এসব সরকারি ওয়েবসাইট পরিচালনা করেন, তাঁদের অজ্ঞাতসারেই এ ধরনের অনলাইন জুয়ার প্রচার চালানো হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন ডিজিটাল নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ আশরাফুল হক। তিনি বলেন, ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা এবং সার্ভারের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত কর্মীদের অবহেলার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এসব ওয়েবসাইট দুর্বৃত্তদের হাতে চলে যেতে পারে।