ঢাকায় নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর মৃত্যু, প্রকৌশলী স্বামী গ্রেপ্তার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে স্বামীর মারধরে আহত গৃহবধূ ফাতেমা নাসরিন (৪৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে তাঁর স্বামী গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা শাখাওয়াত হোসেন (৪৯) কারাগারে আছেন।
পুলিশ সূত্র ও নিহতের স্বজনেরা জানান, ৮ মার্চ মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের বাসায় ফাতেমা নাসরিনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন শাখাওয়াত। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফাতেমা। শুক্রবার দিবাগত রাতে শেরেবাংলা নগরের নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মারা যান তিনি। ফাতেমা নাসরিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের ভাতিজি ছিলেন।
স্বজনদের অভিযোগ, এক কোটি টাকা যৌতুক না দেওয়ায় বঁটি দিয়ে কুপিয়ে ও মসলা বাটার হামান দিস্তা দিয়ে ফাতেমার মাথায় আঘাত করেছিলেন শাখাওয়াত। পরদিনই শাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, শাখাওয়াত বর্তমানে কারাগারে বন্দি আছেন।
মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, ফাতেমা নাসরিন স্বামী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের একটি বাসায় থাকতেন। বিয়ের পর থেকে ফাতেমার স্বামী শাখাওয়াত যৌতুক চেয়ে আসছিলেন। ফাতেমার বাবার বাড়ি ঠাকুরগাঁও শহরে। সেখানে থাকা জমি বিক্রি করে এক কোটি টাকা যৌতুক দিতে ফাতেমাকে চাপ দিচ্ছিলেন শাখাওয়াত হোসেন। যৌতুক না পেয়ে তিনি ফাতেমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন তিনি। পরিবারের সবাই ওই জমির অংশীদার জানালে শাখাওয়াত ক্ষিপ্ত হয়ে ফাতেমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান। চলতি বছরের জানুয়ারিতে চাকরি সূত্রে ফাতেমার স্বামী শাখাওয়াত পঞ্চগড়ে ছিলেন। সেখানে ফাতেমার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। গত ১০ জানুয়ারি ফাতেমা বাদী হয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ শাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ফাতেমা তাঁর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন। জামিনে মুক্ত হয়ে ফাতেমার স্বামী শাখাওয়াতও বদলি হয়ে ঢাকায় আসেন এবং তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
ফাতেমার বোন ও মামলার বাদী আরজিনা বেগম শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, মামলা করায় শাখাওয়াত তাঁর বোনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ৮ মার্চ শাখাওয়াত তাঁর বোনের (ফাতেমা) কাছে আবার যৌতুক চান। ফাতেমা এর প্রতিবাদ করলে শাখাওয়াত বঁটি দিয়ে ফাতেমাকে এলোপাতাড়ি কোপান। এতে হাত, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। একপর্যায়ে শাখাওয়াত হামান দিস্তা দিয়ে ফাতেমার মাথায় আঘাত করলে তিনি মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন রক্তাক্ত অবস্থায় ফাতেমাকে উদ্ধার করে নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।