পুলিশের ওপর হামলায় ছাত্রদল–যুবদলের ছয় নেতা–কর্মী শনাক্ত
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকে (পরে বহিষ্কৃত) ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ছাত্রদল-যুবদলের ছয় নেতা–কর্মীকে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের মধ্যে দুজন শুক্রবার ভোরে রাজধানীর নিউমার্কেট থানার সামনে পুলিশের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, শনাক্ত হওয়া ছয় নেতা হলেন কলাবাগান থানা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সহসাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান (বেলাল), কলাবাগান থানা ছাত্রদলের সদস্য আল ওয়াসি (এরিক), ধানমন্ডির যুবদল কর্মী মো. শরিফুল ইসলাম দুর্জয়, ধানমন্ডি থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি আশরাফুল আলম পারভেজ (বর্তমানে যুবদল করেন) ও ধানমন্ডি থানা ছাত্রদলের নেতা চঞ্চল ও কর্মী সালমান। সেদিন থানার সামনে যে ৪০–৫০ জন ব্যক্তি জড়ো হন তাঁদের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শরিফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান।
চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিতে ১০ জানুয়ারি রাতে এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে ওই বিপণিবিতানের ব্যবসায়ী ও সাবেক ছাত্রদল নেতা এহতেশামুল হককে কুপিয়ে জখমের ঘটনার তদন্তে ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে মিথুনের নাম আসে। মোহাম্মদ হোসাইনকে ধরতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের খালেক মার্কেটে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতির খবর রাত তিনটার পর অনুসারীদের জানিয়ে নিউমার্কেট থানার সামনে জড়ো হতে বলেন ওই ছাত্রদল নেতা। এরপর ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ভোর ৪টা ১০ মিনিটে থানার সামনে পৌঁছালে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা পুলিশের মধ্যে ভয় তৈরি করে আসামি ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিলেন বলে হামলার ঘটনা তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে।
পুলিশের ওপর হামলার একটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানিয়েছে, সেদিন থানা চত্বরের বেড়া টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন হামলাকারীরা। এ সময় দুই ব্যক্তি চিৎকার করে পুলিশের উদ্দেশে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকেন। তাঁদের একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘পুলিশ কে? আমরা গুলি খেয়েছি, আমরা কেন কথা বলতে পারব না?’ তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই দুই ব্যক্তির একজন যুবদল কর্মী মো. শরিফুল ইসলাম দুর্জয়। গলায় সাদা-কালো রঙের মাফলার ও সাদা রঙের সোয়েটার পরা দুর্জয়কে আরেকটি ভিডিওতে পুলিশের সঙ্গে মারমুখী ভূমিকায় দেখা যায়।
থানার সামনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার অন্তত চারটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, আরেকটি ভিডিও ফুটেজে সাদা টি–শার্ট পরা অবস্থায় ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসানকে দেখা যায়। কালো একটি পোশাক পরা অবস্থায় থানা ফটকের সামনে অবস্থান করছিলেন ছাত্রদল কর্মী সালমান। তাঁর বাসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। স্থানীয় সূত্রে পাওয়া একটি ছবিতে দেখা যায়, সালমান কলাবাগান থানা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সহসাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানকে ফুলের তোড়া দিচ্ছেন। আর হামলার আগে যখন পুলিশের গতিরোধ করা হয়, তখন কালো একটি সোয়েটার পরা অবস্থায় দেখা যায় ছাত্রদলের সদস্য আল ওয়াসিকে।
নিউমার্কেট থানার সামনে থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে মিথুনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওমর ফারুক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ওই মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৩০-৩৫ জনকে। সেখানে তরিকুল নামের এক যুবদল নেতার নামও রয়েছে। এর বাইরে বাবু নামের আরও একজনের নাম এসেছে। তবে বাবুর পরিচয় জানা যায়নি। তা ছাড়া এ ঘটনায় ছাত্রদল মোহাম্মদ হোসাইনের সঙ্গে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান ওরফে রাসেলকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে।
এ মামলায় ইতিমধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন মো. বশির ইসলাম (২১), মো. হাসান (২১), মো. ইমন (২৫), মো. মাসুম মাহমুদ (৩২), মো. আলামিন (৩০) ও মো. আকবর আলী (২১)। এ ছাড়া গ্রেপ্তার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতা মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে মিথুনকেও এ মামলার আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় বশির ইসলামকেও এক দিনের রিমান্ড দেন আদালত। বর্তমানে তিনিসহ মামলার সব আসামি কারাগারে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, রিমান্ডে বশির ইসলাম ছয় ব্যক্তির নাম বলেছেন। তাঁরা সবাই ফুটপাতের হকার। এই ছয় ব্যক্তিসহ পুলিশের ওপর হামলায় যেসব ব্যক্তির নাম এসেছে তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। মামলার আসামিসহ হামলায় যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের বেশির ভাগই এখন আত্মগোপনে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এখন পর্যন্ত যাঁদের শনাক্ত করেছেন, তাঁদের মধ্যে তিনজনের মুঠোফোন নম্বর পাওয়া গেছে। ওই নম্বরগুলোতে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহসীন উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। আসামিদের অনেকে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।