চাকরি: প্রতারিত ব্যক্তি নিজেই হয়ে যান প্রতারক, বিভিন্নজনের কাছ থেকে নিয়েছেন ‘কোটি টাকা’
কাস্টমস বিভাগে (শুল্ক বিভাগ) একাধিকবার চাকরির চেষ্টা করেছিলেন নজরুল ইসলাম (২৯)। ব্যর্থ হয়ে বেশ কিছু টাকাও খুইয়েছেন। একপর্যায়ে নিজেই হয়ে যান ভুয়া শুল্ক কর্মকর্তা, গড়ে তোলেন প্রতারক চক্র। মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে নজরুল ইসলামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন ওয়ায়েস করোনি ওরফে সেলিম (৪৭), নাসির উদ্দিন (২৬) ও সৈয়দ মো. এনায়েত (৪৮)। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার, দুটি মোটরসাইকেল ও প্রতারণায় ব্যবহৃত বিপুলসংখ্যক সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জরুল ইসলামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। তিনি স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ) পাশ করে কাস্টমসে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। চাকরির জন্য বিভিন্ন সময়ে টাকা দিয়ে প্রতারিত হন। ২০১২ সালে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি পেতে এক প্রতারককে ১১ লাখ টাকা দিলেও চাকরি পাননি। এরপর ২০১৩ সালে নৈশপ্রহরী ও ২০১৭ সালে উচ্চমান সহকারী হিসেবে চাকরি পাওয়ার আশায় দুই দফায় প্রতারিত হন। কাস্টমসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় বিভিন্ন কর্মকর্তার সংস্পর্শে আসার সুবাদে তিনি ওই সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে ভালো ধারণা লাভ করেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতারিত হয়ে একপর্যায়ে নিজেই একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন নজরুল। এ জন্য এলাকায় নিজেকে ঊর্ধ্বতন শুল্ক কর্মকর্তা (কাস্টমস অফিসার) হিসেবে পরিচয় দিতেন। এক সময় তাঁর মাধ্যমে কাস্টমসের পিয়ন, ঝাড়ুদার ও অন্যান্য পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে চার-পাঁচজন চাকরি পান। চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা এলাকায় প্রচার করেন যে তাঁরা নজরুলের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। এভাবে তিনি বিশ্বস্ততা অর্জন করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন। চক্রটি গত দুই বছরে ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন প্রায় চার-পাঁচ কোটি টাকা।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের হোতা নজরুলসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটি প্রায় দুই বছর ধরে এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তাদের সদস্য সংখ্যা সাত থেকে আটজন। নজরুল বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে বিদেশ থেকে আসা স্বর্ণ ও মালামাল অর্থের বিনিময়ে ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেও টাকা আত্মসাৎ করতেন। আত্মসাৎ করা এসব অর্থ দিয়ে তিনি ফ্ল্যাট বুকিং, জমি কিনেছেন, বাড়ি ও বিভিন্নভাবে অর্থ সম্পদও গড়ে তুলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ১৭ জন ভুক্তভোগীর তথ্য পেয়েছি। যাদের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন নজরুল। এলাকায় ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রায় ৪-৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তদন্তে বাকিটা বের হয়ে আসবে।’